সব পথ মিশে গেছে ছেঁউড়িয়ায়
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্মরণোৎসবের তৃতীয়দিন শুক্রবার ভক্ত-অনুরাগীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজীর আখড়াবাড়ি। স্মরণোৎসবের তৃতীয় দিনে লালনের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মানুষের ঢল নামে। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত ছিল লালনভূমি ছেঁউড়িয়া। সব পথ যেন এসে মিশেছে মরা কালীর নদীর তীরে আখড়াবাড়িতে। দাওয়াতপত্র ছাড়াই অদৃশ্য এক সুতোর টানে লালনধামে ভিড় জমান সাধু-গুরু বাউলরা ছাড়াও সাধারণ দর্শণার্থীরা।
শুক্রবার ছিল লালন স্মরণোৎসবের তৃতীয় দিন। এ দিন ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মানুষের ঢল দেখা গেছে। পুরোদমে জমে উঠে অস্থায়ী মেলা। খাবার আর খেলনার দোকানগুলোতে দেখা গেছে দর্শণার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এছাড়াও সারা আখড়াবাড়ি ও মাঠই ছিল গানের মঞ্চ। ছোট ছোট আস্তানায় বাউলরা গান পরিবেশন করছেন। ‘কী সন্ধানে যায় সেখানে আমি কী সন্ধান’, ‘মনের মানুষ যেখানে’, ‘একটা বদ হাওয়া লেগে খাচায়’, ‘বাড়ির পাশে আরশিনগর’, ‘খাচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়’, সত্য বল সুপথে চলসহ অসংখ্য লালন সঙ্গীতের সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়েছে লালনধামের আকাশে-বাতাসে।
লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাউলরা এসব সঙ্গীত পরিবেশন করছেন। লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করেছেন তার অমর বাণী পরিবেশনের মাধ্যমে। প্রবীণ বাউল নহির শাহ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেন। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে গানের পাশাপাশি চলছে দীক্ষা পর্ব। নব্য শিষ্যরা গুরুদের সেবা করতে উদগ্রীব। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে শিষ্যদের অটুট লক্ষ্য।
বাউল ফকির শাহ আব্দুল করিম বলেন, বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবন-কর্ম, জাতহীন মানবদর্শন, মরমি সঙ্গীত ও চিন্তা-চেতনা এখন আর এই ছেঁউড়িয়ার পল্লীতেই সীমাবদ্ধ নেই, দেশের সীমানা পেরিয়ে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। তার সঙ্গীত ও ধর্ম-দর্শন গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। স্মরণোৎসবে প্রতিবছরের মতো এবারও সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেছেন। একতারা, দোতরা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া। ভক্ত-অনুসারীরা এসেই প্রথমে মূল মাজারের ভেতরে চিরনিদ্রায় শায়িত তাদের গুরুর প্রতি বিশেষ ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন। তারা জাত, কুল, ধর্ম, গোত্র ভুলে একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মাঠে স্থায়ী মঞ্চে বসছে আলোচনা সভা। এর পরপরই শুরু হয় লালন একাডেমির শিল্পীদের গান।
কুষ্টিয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর স্মরণোৎসব-২০১৫ উপলক্ষে লালন একাডেমি চত্বরে গত চার মার্চ থেকে পাঁচ দিনব্যাপী শুরু হয়েছে লালন স্মরণোৎসব। প্রতিদিন সন্ধা ৭টা থেকে চলছে আলোচনা সভা ও লালন সংগীতানুষ্ঠান। লালন একাডেমির আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় লালন একাডেমি চত্বরে আয়োজিত এ উৎসব শেষ হবে ৮ মার্চ।
এসএইচএ/বিএ/এমএস