হকারদেরও ট্রেড লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে


প্রকাশিত: ০৩:১৫ এএম, ০৭ মার্চ ২০১৫

ফুটপাতের হকারদের অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)  কর্তৃপক্ষ। ডিএসসিসি’র আওতাভুক্ত এলাকার ফুটপাত ও সড়কের বিভিন্ন অংশ দখল করে রেখেছে প্রায় লক্ষাধিক হকার। এদের কাছ থেকে দৈনিক ও মাসিক হারে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে পুলিশ, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় মাস্তানরা। এসব দোকানপাট অবৈধ হলেও নানা কারণে উচ্ছেদ করতে পারছে না ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। আবার এখান থেকে কোনো রাজস্বও আদায় করা যাচ্ছে না। যদিও এসব দোকানপাটের কারণে সৃষ্ট আবর্জনা পরিষ্কারের কাজটি করতে হয় সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরই।  এ অবস্থায় দখলকৃত এসব জায়গা হকারদের অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।

ডিএসসিসির সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রশাসক ফুটপাত এবং সড়কের অবৈধ দখলদারদের ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী। সংস্থার বিভিন্ন বৈঠকে তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বারবার সতর্ক করছেন। রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসসিসি যাদের ট্রেড লাইসেন্স দিতে চাইছে; তারা রাজধানীর এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা যেতে পারে। ফুটপাত এবং সড়কের অবৈধ দখলদারদের এভাবে ট্রেড লাইসেন্স দিলে তা এক সময় ডিএসসিসির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সূত্র জানায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক অফিস আদেশে আগামী দুই মাসের মধ্যে ডিএসসিসি এলাকার যেসব দোকানপাটের ট্রেড লাইসেন্স নেই, সেগুলোর ট্রেড লাইসেন্স কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারদের পাশাপাশি, পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং ওয়ার্ড সচিবদের ট্রেড লাইসেন্স তৈরির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টেড্র লাইসেন্স তৈরিতে মাঠ পর্যায়ে ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ শুরু করেছেন।

ডিএসসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান  বলেন, ফুটপাত এবং সড়কের ভাসমান ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটা কোন প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও চিন্তা-ভাবনা চলছে।

ডিএসসিসির এ কর্মকর্তা বলেন, ফুটপাত এবং সড়ক সিটি কর্পোরেশন তৈরি করে, সংরক্ষণ করে এবং এসব এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার করে। অথচ এদের (ফুটপাতের ব্যবসায়ী) কাছ থেকে কোনো রাজস্ব পায় না সিটি কর্পোরেশন। আবার এদের সরানোও যাচ্ছে না। একটি চক্র এদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। এর জন্য বর্তমান ডিএসসিসি প্রশাসন এ বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা করছে। এই হকারদের ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে সংস্থার রাজস্ব বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক বিভাগীয় কর্মকর্তা বলেন, স্বাভাবিক সময় রাজধানীতে যানজটের কারণে চলাচলে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়। এর অন্যতম কারণ সড়ক এবং ফুটপাত দখল। বৈধতা দিলে সড়ক ও ফুটপাতের দখলের মাত্রা বেড়ে যাবে। আর এসব নিয়ে বাণিজ্য করবে ডিএসসিসিরই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি খোকন মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ-হকার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি একাধিক সভাও করেছে। ওই সভায় আমরা হকারদের ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছি। আমরা বলেছি, যেটা করলে নগর এবং হকার উভয়ের জন্য ভালো হয়, সেই পথ বের করুন। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সমাধান আমলাদের কাছ থেকে নিতে চাই না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই বিষয়ে সমাধান হলে তা আমাদের জন্য ভালো হবে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান বলেন, ফুটপাত ও সড়কের ভাসমান ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চললেও আমরা সবার আগে বিভিন্ন মার্কেটের যেসব দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নেই সেগুলোর বিষয়ে নজর দিচ্ছি। অন্য বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে দেখা হবে। । সূত্র : যুগান্তর

এসএইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।