১০টি জাহাজ কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার


প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য ৪টি এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জন্য ৬টি জাহাজ ক্রয়সহ মোট ১৩টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। আর এজন্য মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।

এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় মালয়েশিয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রস্তাবিত ৮ হাজার ৪০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের একটি প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বৈঠকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, দেশের সমুদ্র এলাকায় নজরদারি বাড়াতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ইতালির নৌবাহিনীর কাছ থেকে সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৪টি জাহাজ কেনা হবে। জাহাজগুলি বর্তমানে ইতালির নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। মিনার্ভা ক্লাশ করভেটি জাহাজগুলিকে অপশোর পেট্রোল ভেসেলে রূপান্তরিত করে এগুলো বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে।

সূত্র জানায়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্র এলাকা অর্জন করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই সমুদ্র এলাকা বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তবে অর্জিত এই বিশাল এলাকায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের গভীর সমুদ্রগামী কোন জাহাজ নেই। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮টি অফশোর পেট্রোল ভেসেল কেনার প্রস্তাব করে। তারই অংশ হিসেবে ৪টি অফশোর পেট্রোল ভেসেল কেনা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম-সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোস্টগার্ডের জন্য ৪টি জাহাজ কেনার প্রস্তাবে কমিটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। জাহাজগুলো ইতালি থেকে সংগ্রহ করা হবে। ইতালির নৌবাহিনীর ব্যবহার করা এ জাহাজ ৪টি সম্পূর্ণ নতুন করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর এ জন্য ব্যয় হবে ৯৬৬ কোটি টাকা।’

বৈঠকে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ৬টি নতুন জাহাজ ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এরমধ্যে ৩টি অয়েল ট্যাংকার এবং ৩টি বাল্ক কন্টেইনারবাহী জাহাজ। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে এক হাজার ৮১১ কোটি টাকা।

যুগ্ম-সচিব বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায় : ২৪টি নৌ-পথ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কাটার সাকশন ড্রেজার দ্বারা খুলনা-গাজীরহাট-বরদিয়া-মানিকধা রুটে ড্রেজিংয়ের কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কাজটি পেয়েছে মেসার্স বাংলা ড্রেজিং লিমিটেড।

এছাড়া একই প্রকল্পে দিলালপুর-ঘোড়াদীঘা-চামড়াঘাট-নিকলি-নেত্রকোনা রুটের কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মেসার্স এসিআই-এসএসআরআই যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।’

বৈঠকে ‘এক লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থপতি সংসদ লিমিটেড পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। তাদের কাছ থেকে সেবা নিতে ব্যয় হবে ১১ কোটি৯৯ লাখ টাকা।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে লাইন-হার্ডওয়্যার ও ইনস্যুলেটর ক্রয়ের আলাদা দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।’

বৈঠকে জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পে’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত (ভেরিয়েশন অর্ডার) কাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত কাজের অতিরিক্ত কাজ করায় তাদেরকে অতিরিক্ত ২৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রি-মডেলিং ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনেরঅপারেশনাল সুবিধা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্ল্যাটফর্ম লিঙ্কসহ কার পার্কিং এলাকা, ফুটপাতসহ রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বাউন্ডারি ওয়াল, স্যানিটারি ও প্লাম্বিং ওয়ার্কস, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, পিএবিএ চ্যানেল ও সকল বৈদ্যুতিক সংযোগসহ তিনতলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ভবন নির্মাণের (প্যাকেজ ডব্লিউডি-২) ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পেয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন।’

বৈঠকে ‘ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে’র আওতায় মাঝগ্রাম-পাবনা সেকশনের শূন্য থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় প্যাকেজ ডব্লিউডি-৫ (লট-এ)-এর কনস্ট্রাকশন, ইনস্টলেশন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক অটোমোবাইল সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এজন্য ব্যয় হবে ৬৪ কোটি টাকা।

যুগ্ম-সচিব বলেন, ‘কমিটি ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা পরিবেশবান্ধব দীর্ঘ মেয়াদি পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের সরবরাহ নেটওয়ার্কের উন্নয়নে ‘ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সুপারভিশন কনসালটেন্ট’ নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। পরার্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা নিতে মোট ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে।কোরিয়ার কুনওয়া-ডিডিসি-এফসিইএ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। এছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় সরবরাহ নেটওয়ার্কের উন্নয়নে (ডিএনআই কন্টাক্ট নং আইসিবি ০২.৭) মেইনটেন্যান্স, অপারেশন, ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড সার্ভিসেস জোন-৬ এর কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ২৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। মেসার্স আরপিএল-এফএসএল-সিআরইজি যৌথকোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’

এছাড়াও বৈঠকে জাইকার সহযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে পতেঙ্গ-সাগরিকা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৬৪০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এসিএল-কেএনআর যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।তবে বৈঠকে টার্নকি ভিত্তিতে ‘কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র ইউনিট ১ ও ২-এর পুনর্বাসন, স্পিলওয়ে ও ফোর-বে চ্যানেল কাজের একটি ক্রয় প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।

এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।