বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল সংসদে উত্থাপন


প্রকাশিত: ০২:১৭ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬

ছেলের বয়স ন্যূনতম ২১ বছর ও মেয়ের বয়স ১৮ নির্ধারণ করে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬’ শীর্ষক বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। তবে বিলে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না’।

বৃহস্পতিবার বিলটি উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমাম। তবে তার প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় আলোচিত এই বিলটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনে বিয়ের জন্য ছেলের বয়স ২১ বছর ও মেয়ের বয়স ১৮ করা হলেও ‘বিশেষ কেইসের’ জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিশেষ বিধান বাতিলের দাবি জানানো হয়।

বুধবার জাতীয় সংসদে বিশেষ বিধানের ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করেই এই বিধান রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। সর্বশেষ ওই বিধান রেখেই সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার, বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে পারবে।

আরো বলা হয়েছে, এই আইনের বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বিলের ৫ নং ধারায় বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আদালতকে।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করলে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগের জন্য একই দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বিলে কোনো নারী ও পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর এ ধরনের বিয়েকে মাতা-পিতাসহ অন্যান্যদের শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের জন্য শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ সারা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকার একটি সুস্পষ্ট লংঘন। বাল্যবিবাহে প্রজনন স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যা মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর ঘটনা বাড়িয়ে দেয়।

আরো বলা হয়েছে, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এই অবস্থায় বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা জরুরি। সেই আইন প্রণয়নের জন্য এই বিলটি আনা হয়েছে।

এদিকে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন-২০১৬’ নামের আরো একটি বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। উন্নয়ন অর্থনীতি, জনসংখ্যাতত্ত্ব ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনুসন্ধান, গবেষণা পরিচালনা ও জ্ঞান বিস্তারের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং এসংক্রান্ত বিষয়ে বিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এইচএস/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।