সোয়াইন ফ্লু ঝুঁকিতে সীমান্তের চোরাইপথ


প্রকাশিত: ০৪:৫৯ এএম, ০৪ মার্চ ২০১৫

সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সরকার ইতোমধ্যে আগাম শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনসহ গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন টিম। তবে সোয়াইন ফ্লো রোগের ভাইরাস আক্রমনে বড় সংকট তৈরি হয়েছে সীমান্তের চোরাইপথ নিয়ে। ভারতের সঙ্গে বিস্তর সীমান্তপথ দিয়ে প্রতিদিন দেশের মধ্যে শত শত মানুষ আসা-যাওয়া করছে। যেখানে এই রোগ বা রোগের ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসা ব্যক্তিকে শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এক অর্থে যা সম্ভবও নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোরাইপথে লোকজন আসা বন্ধ করতে না পারলে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ করা আদৌ সম্ভব হবে না। অথবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে ভারতে এ রোগ ইতিমধ্যে এক প্রকার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনেকের মধ্যে এ নিয়ে আতংক বিরাজ করছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে আতংকিত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ রোগ নিয়ে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

প্রতিরোধ প্রস্তুতি : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে দেশের ২২টি স্থল ও নৌবন্দর এবং ৬৪ জেলা ও সীমান্তবর্তী জেলায় বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। ন্যূনতম একজন মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে ৫ থেকে ১২ সদস্যবিশিষ্ট এসব টিম ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকয় কর্মতৎপরতা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামছুজ্জামান। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিক মেডিকেল অফিসারের সমন্বয়ে ৫০ জনের একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

এছাড়া রোগ নির্ণয়ের জন্য স্থাপন করা হয়েছে দুটি অত্যাধুনিক থার্মাল স্ক্যানার। এই স্ক্যানার মেশিনের মধ্য দিয়ে প্রবেশের সময় অথবা এর কাছে অবস্থানকারী কারও শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে তা ধরা পড়বে। এরপর সন্দেহভাজন ব্যক্তির অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সোয়াইন ফ্লুর জীবাণু আছে কিনা তা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এছাড়া বিমানবন্দর ত্যাগকারী প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টিমের সদস্যদের হাতে রয়েছে ননটাচ থার্মোমিটার।

এদিকে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এমএজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর, বিবির বাজার, সোনা মসজিদ, বুড়িমারী, বিরল, বাংলাবান্ধা, টেকনাফ, বিলোনিয়া, আখাউড়া, তামাবিল, জকিগঞ্জ, সুতারকান্দি, জাহাঙ্গীর নগর, টেকের হাট, সীমান্তবর্তী বাল্লা স্থলবন্দর, চাতালপুর এবং ফুলতলা স্থলবন্দরে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনটি বিমানবন্দর ও দুটি সমুদ্রবন্দরে মোট ৭টি থার্মাল স্ক্যানার স্পন করাসহ ৭২টি স্থানে ফ্লু নির্ণয়ে ননটাচ থার্মোমিটার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া দেশের কোথাও ফ্লু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে সব স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতিশেধক ভ্যাক্সিন প্রদান করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) ড. সামছুজ্জামান জানান, এই রোগের বিস্তার ঘটতে শুরু করলে প্রাথমিকভাবে যাতে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেজন্য ১০ হাজার লোকের ওষুধ মজুদ করা হয়েছে। তিনি দেশের জনগণকে আতংকিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এবং ভারতে ভ্রমণইচ্ছুদের ভ্যাক্সিন নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি জানান, ২০০৯ সালে সারা দেশে ৮ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হলেও মারা গিয়েছিল মাত্র ৮ জন। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে সেসময় মহামারী আকার ধারণ করেছিল।

সীমান্তে বিশেষ সতর্কতা : সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই রোগ প্রতিরোধে ৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে জেলার প্রায় তিনশ’ কিমি. সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন শত শত গবাদি পশু দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে। এছাড়া ভুরুঙ্গামারীর ‘সোনাহাট’ ও রৌমারীর ‘চর নতুন বন্দর’ স্থলবন্দর দিয়েও চোরাইপথে চোরাকারবারিদের আসা-যাওয়া অব্যাহত আছে। এসব কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চোরাইপথে আসা মানুষের মাধ্যমে ভারত থেকে সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস কুড়িগ্রাম জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা. নাসরিন বেগম জানান, ৪ সদস্যের টিম সোনাহাট স্থলবন্দরে মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেছে। মালামাল পরিবহনের ড্রাইভারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিনি গড়ে ২০০-২৫০টি ট্রাক ডুকছে এ স্থলবন্দরে। তাদের জিরো পয়েন্টে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্তদের গাড়ি নিয়ে না পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা. শাহজাহান কবির জানান, হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট থেকে মেডিকেল টিম মনিটরিং করছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, শুধু স্থলবন্দরে স্ক্যানার মেশিন বসিয়ে তো কোনো লাভ নেই। যদি চোরাইপথে আসা লোকজন প্রতিরোধ করা না যায় তাহলে সরকারের সব চেষ্টাই বিফলে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ভারতের সোয়াইন ফ্লু বিস্তারের কারণে বাংলাদেশে যাতে এর সংক্রমণ না ঘটে সেজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক করা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন মনিটরিং করছেন।

এসএইচএ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।