উলফার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০৪:৪৬ এএম, ০৩ মার্চ ২০১৫

দেশে সাম্প্রতিক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা জাতীয় দৈনিক ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি হিজবুত তাহরীরের পোস্টার ছাপানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে ডেইলি স্টারের সমালোচনা করেন। এ ছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে একটি বাংলা দৈনিকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারাই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উসকানি দিচ্ছে।

অনির্ধারিত এ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ওই বাংলা পত্রিকাটির সঙ্গে ভারতের আসামকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র যোগাযোগ রয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় উলফার বিনিয়োগ আছে, কারা উলফার টাকায় চলে, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং কথা হয়, তার সব রেকর্ড সরকারের কাছে আছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। অনির্ধারিত এ আলোচনায় অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও আসে। প্রধানমন্ত্রী জানান, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। শিগগিরই তদন্তের ফলাফল জানা যাবে।

নাশকতা বৃদ্ধিতে মন্ত্রিসভায় উদ্বেগ : বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিসভার একজন সদস্য গত দু’দিন ধরে হঠাৎ পেট্রলবোমা ও নাশকতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আনেন। এ সময় বেশ কয়েকজন সদস্য তাকে সমর্থন করে বলেন, মাঝখানে নাশকতা কমে এসেছিল। হঠাৎ করে আবার বেড়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দিকে তাকালেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি চুপ ছিলেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিস্ফোরক উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেন। তার মতে, বাসে পেট্রলবোমা হামলাসহ বোমা ও ককটেল বানাতে যে বিস্ফোরক ব্যবহার হচ্ছে তার অধিকাংশই পার্বত্য এলাকা হয়ে দেশে প্রবেশ করছে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে পারে না উল্লেখ করে তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এসব এলাকায় কম্বিং অপারেশন জোরদার করতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরের একটি বাসা থেকে ৭৬টি বোমা, ১৫০ কেজি বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ৪ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে হাটহাজারী ও বাঁশখালী থেকেও জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে পেট্রলবোমা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বলেন, যারা পেট্রলবোমা হামলা চালাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগেরই নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কূটনীতিকদের বিদেশী নাগরিককে বিয়েতে বাধা কাটছে : বিদেশী নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশী কূটনীতিকদের বিয়ের বিধান রেখে গণকর্মচারী (বিদেশীদের সহিত বিবাহ) আইন ২০১৫ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ সম্মেলনে জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের সভার পর সরাসরি এ খসড়া আইন সংসদে উত্থাপিত হবে।

তিনি বলেন, পূর্বের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, কূটনীতিক ব্যতীত অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে বিদেশী নাগরিককে বিয়ে করতে পারতেন। ২০০৮ সালের অর্ডিন্যান্স সংশোধন করার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনসাপেক্ষে কূটনীতিকরাও বিদেশী নাগরিককে বিয়ে করতে পারবেন। নারী-পুরুষের জন্য একই আইন হবে। তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া যদি কেউ বিয়ে করেন, সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

বিদ্রোহে শাস্তি পাবে আনসাররা : বিদ্রোহের শাস্তি ও বাধ্যতামূলক অবসরসহ নতুন কিছু শাস্তির বিধান রেখে ‘ব্যাটালিয়ন আনসার (সংশোধন) আইন, ২০১৫’-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (মতামত) নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সময় আইনের খসড়ায় বিদ্রোহের শাস্তি যুক্ত করার অনুশাসন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিডিআর (এখন বিজিবি) বিদ্রোহের কথা বিবেচনা করে পরে বিজিবি আইনে বিদ্রোহের শাস্তি যুক্ত করা হয়েছে। কোস্টগার্ড আইনেও বিদ্রোহের শাস্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন আনসার আইনেও এ বিধান যুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে অঙ্গীভূত আনসারদের ৯ বছরের জায়গায় ৬ বছর দায়িত্ব পালনের পর স্থায়ী হওয়ার বিষয়টি আইনে যুক্ত করারও নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ১৯৯৫ সালে আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়ন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী এটি এখন সংশোধন করা হচ্ছে। ওই আইনে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সময় অপরাধের শাস্তির তালিকা রয়েছে। কিন্তু কিছু শাস্তির কথা তালিকায় নেই। এতে প্রশাসনিক অসুবিধা হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে বিভাগীয় শাস্তির ক্ষেত্রে সবার উপরে রয়েছে বরখাস্ত, এরপর অপসারণ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর। লঘু দণ্ড হচ্ছে তিরস্কার। বাধ্যতামূলক অবসরসহ মাঝখানের কিছু শাস্তির বিষয় আনসার আইনে নেই। তাই বাধ্যতামূলক অবসর, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিত করা, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা, দক্ষতাসীমা অতিক্রম বন্ধ রাখা ও আর্থিক ক্ষতি হলে আনুতোষিক থেকে পূরণ এ বিষয়গুলো সংশোধন করে আনসার আইনে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের জন্য ইউনিটপ্রতি ৩ পয়সা বাড়তি বিল : কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকার সামাজিক উন্নয়ন তহবিল গঠন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১৫-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নীতিমালা অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ পয়সা করে বাড়তি নেবে কোম্পানি। এ অর্থ দিয়েই প্রকল্প এলাকার জন্য সামাজিক উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হবে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২১ সালে ২৪ হাজার ও ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সরকার। এ বিদ্যুতের অর্ধেকই হবে কয়লা বিদ্যুৎ। যেসব এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হবে, সেসব এলাকায় এ তহবিলের অর্থ স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হবে। তহবিল ব্যবহারের জন্য প্রতিটি এলাকায় কমিটি গঠন করা হবে।

এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের উত্থাপিত ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আইন ২০১৫’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। তিনি বলেন, মূল আইনে অনুমোদিত মূলধন ছিল এক কোটি টাকা। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান এবং পাঁচজন সার্বক্ষণিক ও দু’জন খণ্ডকালীন পরিচালক ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ পাঁচজনের স্থলে সাতজন সার্বক্ষণিক পরিচালকের পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে।

এসএ/এআরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।