যেকোনো সময় খালেদার কার্যালয়ে তল্লাশি


প্রকাশিত: ০৫:৪৭ এএম, ০২ মার্চ ২০১৫

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে তল্লাশির পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এর ফলে পুলিশ এখন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে পারবে।

ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে আদালতের আদেশের কপি গুলশান থানায় পৌঁছেছে। রোববার সন্ধ্যার আগেই এ আদেশ থানায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম।

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কখন তল্লাশি চালানো হতে পারে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, যখন প্রয়োজন মনে হবে তখন তল্লাশি করা হবে।

তবে বিএনপির নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করার কৌশল হিসেবে সরকার পুলিশকে দিয়ে আদালতে তল্লাশি পরোয়ানার আবেদন করিয়েছে। মূলত তল্লাশির নামে ওই কার্যালয়ে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসনের নিজস্ব কর্মকর্তা ও নেতাদের বের করে আনতে চায় সরকার। যাতে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণভাবে নিঃসঙ্গ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ ছাড়া কার্যালয়ে যোগাযোগ-সংশ্লিষ্ট কোনো ধরনের সরঞ্জাম থাকলে তা উদ্ধার করা তল্লাশি অভিযানের উদ্দেশ্য হতে পারে।

গ্রেফতার ও তল্লাশি পরোয়ানা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। তাঁরা বলছেন, পরোয়ানা সত্ত্বেও তাঁর আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিরও কোনো ব্যত্যয় হবে না।

সরকারের দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়াকে আপাতত গ্রেফতারের কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই। যদি আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে হয়, সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়। খালেদা জিয়া গত ৪ জানুয়ারি থেকে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।

গুলশানা থানায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের এ কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান এ আদেশ দেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনকে তাঁর কার্যালয় থেকে বের করার উদ্দেশে এই পরোয়ানা আদেশ জারি করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এটা সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয় থেকে বের করতে গত দুই মাসে সরকার একের পর এক নানা কৌশল নিয়েছে। প্রথমে তাঁকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর তাঁর ওপর পেপার স্প্রে ছুঁড়ে, কার্যালয়ের বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবাসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে বাধা দিয়ে এবং কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের নামে উৎপীড়ন সৃষ্টি করা হয়।

খালেদা জিয়া প্রায় দুই মাস ধরে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। কয়েকজন নেতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অর্ধশত ব্যক্তি সেখানে আছেন। এখন সেখানে খালেদা জিয়ার আত্মীয়স্বজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আর গ্রেফতারের ভয়ে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা অন্যরা কেউ বেরও হচ্ছেন না।

এ অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আগামীকাল এ মামলা দুটির পরবর্তী তারিখ ধার্য আছে।

সরকারের প্রস্তুতি : সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এ দুটি মামলায় আইনগত নির্দেশ পেলে বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারের জন্য সরকারের প্রস্তুতি আছে। গ্রেফতারের পর তাঁকে কোথায় রাখা হবে, তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নীতিনির্ধারকেরা জানান, গ্রেফতার হলে খালেদা জিয়াকে কাশিমপুর কারাগারে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর জন্য ঘর নির্ধারণ, নিরাপত্তাব্যবস্থা, খাবার-দাবারসহ নানা বিষয়ে প্রস্তুতি আছে। এ ছাড়া কারাগারের বাইরে কোনো বাড়িকে উপকারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে রাখার বিষয়েও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে তাঁর গুলশান কার্যালয়কে উপকারাগার ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। সূত্র : প্রথম আলো

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।