স্বর্ণ পাচারে জড়িত বিমানেরই ২৭২ কর্মকর্তা-কর্মচারী

বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচারে খোদ বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে গোয়েন্দা সংস্থার গোপন এক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া দেশের স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে এই ২৭২ জনের মধ্যে গ্রেফতারের ভয়ে বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন ৪৪ জন। আর গ্রেফতারের ভয়ে পলাতকের এই তালিকায় সবশেষ নামটি ডেপুটি চিফ অফ ট্রেনিং শামিম নজরুল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দফতরে প্রেরণ করেছে। পরে পুলিশ সদর দফতর দেশের বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দাদের নিকট এর ভিত্তিতে তথ্য পাঠিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ নভেম্বর বিমানের বিজি ০৪৬ ফ্লাইটের স্টুয়ার্ড মাজাহারুল ইসলাম রাসেল ২ কেজি স্বর্ণসহ আটক হন। পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, এ ব্যাপারে তথ্য প্রদান করেন তিনি। পরে গোয়েন্দা পুলিশের দলটি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিসের ডিজিএম এমদাদ হোসেন, চিফ অফ প্লানিং অ্যান্ড সিডিলিউংয়ের ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহিদ, ম্যানেজার (সিডিউলিং) তোজাম্মেল হক, ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ, ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুনুর রশিদকে আটক করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাহমুদুল হক পলাশ নিজেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ধর্মপুত্র পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি স্বর্ণ পাচার, বিমানে নিয়োগ, বদলি, বিমান লিজসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে কমিশন গ্রহণ করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার এ সকল কর্মকাণ্ডে সহযোগী রয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী কেবিন ক্রু নূর জাহান, জেনারেল ম্যানেজার (নিরাপত্তা) মোমিনুল, জেনারেল ম্যানেজার (এ্যাডমিন) আতিক সোবহান,  ডাইরেক্টর অ্যাডমিন রাজপতি সরকার, ক্যাপ্টেন মাহাবুব, শোয়েব চৌধুরী, ও ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক হোসেন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঊর্ধ্বতন এ সকল কর্মকর্তা ছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫ জন পাইলট, ৪ জন কো পাইলট, ২৫ জন কেবিন ক্রু, ১৫ জন ফ্লাইট স্টুয়ার্ড, ৩ জন ফ্লাইট পার্সার ও ৫ জন চিফ পার্সরসহ মোট ২৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ পাচারে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ নভেম্বর চোরাচালানের দায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওই কর্মকর্তারা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ২ জন পাইলট, ৩৪ জন কেবিন ক্রুসহ বিমান বাংলাদেশের মোট ৪৪ জন সদস্য বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। এছাড়া দেশ থেকে পালিয়ে যায়ং ডেপুটি চিফ অফ টেনিং শামিম নজরুল ইসলাম।

বিমানের এসব কর্মকর্তাদের চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে এবং তারা আত্মগোপনে থাকার ফলে ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চোরাচালান প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রসঙ্গে জানান, এর মধ্যে অনেকেই বিদেশে পলাতক রয়েছেন আবার অনেকে দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের খোঁজ পাওয়া গেলে গ্রেফতার করা হবে।

এসআরজে