বাংলাদেশ, আমার সম্প্রসারিত মাতৃভূমি : প্রসেনজিৎ
অনেক দিন পর বাংলাদেশে। বাংলাদেশ নামটিই আমাকে এটাকে আলাদা একটি দেশ হিসেবে ভাবতে দেয় না। এর জনসাধারণ, এর সংস্কৃতি, এর সাহিত্য সবই আমার হৃদয়ের এত কাছাকাছি! এই দেশের অদ্ভুত একটি আবেগময় আবেদন রয়েছে যা আমাকে মাটির নিজস্ব গন্ধে, ঐক্যের অকৃত্রিম আনন্দের উদযাপনে এবং জ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে শোনা শৈশবের অনেক গল্পে ভরিয়ে তোলে। এবারের বাংলাদেশ ভ্রমণ আরও বিশেষ; কারণ গৌতম ঘোষ, মুনমুন সেন, দেবের মতো বিশেষ ব্যক্তিরা আমার সঙ্গী হয়েছেন। এবারের ভ্রমণ নিয়ে আমার উত্তেজনার আরেকটি কারণ হচ্ছে, আমার বাংলাদেশি স্বজনদের সঙ্গে `আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস` পালন করা।
বলা হয়ে থাকে যে, আমাদের এখানকার বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারে সাধারণত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের মাধ্যমে। আর সেগুলোর অধিকাংশই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক সংঘাতের মতো করুণ বিষয়ে ভরা থাকে। এটা কলঙ্কজনকই যে, আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক খবর শুনি না বললেই চলে। অথবা বিষয়টি এমন, দেশটির ইতিবাচক দিকের বদলে নেতিবাচক সংবাদগুলোতেই আলোকপাত হয় বেশি। সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমি অনুভব করি, বিশ্বায়নের স্রোতে গা ভাসানো থেকে বাংলাদেশ বিস্ময়করভাবে নিজের স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতে পেরেছে। তাদের শিল্পের সব মাধ্যমেই এখনও মাটির ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
`মনের মানুষ` ছবির চিত্রধারণের সময় আমার সেখানকার থিয়েটার ব্যক্তিত্বদের কয়েকজনের সঙ্গে আমার ভাববিনিময়ের সুযোগ হয়েছিল। তারা দারুণ মেধাবী। আমাদের দুই বাংলার শিল্পের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি প্রতিদিন সেখানকার মানুষের কাছ থেকে এত মেসেজ পেয়ে থাকি! দুই দেশের শিল্পীদের নিয়ে একটি প্রকল্পের অংশ হতে চায় তারা। বস্তুত আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক শিল্পীই আছেন, বাংলাদেশে যাদের বিপুল ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী রয়েছে। সেখানে অনেক মেধাবী পরিচালক, অভিনেতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, গীতিকার রয়েছেন, যারা সিনেমার নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি এবং ভালো কাজের জন্য উদগ্রীব। আমি জানি না কতজন `আমি সেই মেয়ে` সম্পর্কে এখনও স্মরণ করতে পারেন। অভিন্ন মাতৃভাষার দুই প্রতিবেশী দেশের সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে এটি ছিল ছোট্ট একটি উদ্যোগ। আমরা যদি এটা সম্ভব করে তুলতে পারি, তাহলে এর এক বিরাট বাজার রয়েছে, যা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দুই দেশের প্রযোজকরা যদি এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন, তাহলে অন্যান্য তাৎপর্য তো আছেই, দুই দেশেরই বিনোদন শিল্প আর্থিকভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
বিঘ্ন আগেও ছিল, আমরা যদি এখনকার চেয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা না করি, তাহলে ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু তা করে আমাদের হৃদয়ের চেতনা গুঁড়িয়ে দিতে পারবে না। এ ব্যাপারে গভীর চিন্তা-ভাবনার এখনই সময়। তা না হলে অভিন্ন ভাষার বন্ধনে থাকা ভারত ও বাংলাদেশে কেবল ভাষার আনুষ্ঠানিকতা উদযাপনের অর্থ কী? তা না হলে কেন আমরা সেই কবিদের স্মরণ করছি, যারা দুই বাংলার ঐক্যের কথা লিখেছেন? কেন প্রায় সবসময়ই সেই ঐক্যের কথা বলছি? শিল্পের যে কোনো মাধ্যমই কোনো সীমাবদ্ধতা, ধর্মের ভেদ, ভৌগোলিক দূরত্ব মানে না। শিল্পের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। আর আমরা পেয়েছি `আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস`। আসুন শিল্পের নিজের ভাষা উদযাপন করি!
এএইচ/এমএস