ঝিনাইদহের পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
ঝিনাইদহের মিষ্টি পানের কদর দেশের মাটিতেই নয় বিদেশেও রয়েছে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এ জেলার পানের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। যা এখন মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যেও যাচ্ছে। ফলে পান চাষিরা লাভবান হচ্ছে প্রতি বছরই। বর্তমানে জেলার চাষিরা শুধু পান রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আয় করতে পারছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ আয় ৬০-৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া, শিতলী, জোড়াপুকুর, মান্দারতলা, বৈঠাপাড়া, কুলবাড়ীয়া, গাজীপুর, ভাবনীপুর, ভায়না, দখলপুর, পার্বতীপুর, নারায়ণকান্দি লক্ষীপুর, বিন্নীসহ অর্ধশত গ্রামের মাঠ জুড়ে পানের বরজ লাগিয়েছেন চাষিরা। সবুজে সবুজে ভরে গেছে তাদের মাঠ। এতে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। বারতি লাভ হওয়ায় তারা পানের বরজে পরিচর্যাও ভালোভাবেই করছেন। এক বিঘা জমিতে পান চাষ করলে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হয় বলে জানান চাষিরা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মাটি পান চাষের উপযোগী হওয়ায় জেলার হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর এ ৬টি উপজেলাতেই কমবেশি পানের চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলাতে।
ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার পান চাষি রয়েছে। আরও দুই লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পান চাষের সঙ্গে জড়িত।
সূত্র আরও জানায়, জেলা সদরসহ হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার বলিদাপাড়া, রাইগ্রাম, দুলাল মুদ্দিয়া, মঙ্গলপৈতা, বারবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বড় বড় পানের বরজ। শুধু হরিণাকুন্ডুর ভাবনীপুর, পার্বতীপুর ও ভায়না বাজার থেকে প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রাক উন্নত মানের পান ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।
জেলার ৬টি উপজেলার সুস্বাদু মিষ্টি পান সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের ১০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও আমেরিকায়ও এ জেলার পানের কদর রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের পান চাষি কামাল হোসেন জানান, তাদের কাছে এখন পান পাতাই সোনা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে পান চাষ করলে ১ বিঘা জমি থেকে বছরে প্রায় ২/৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হয়।
তিনি এও জানান, পানের বরজ স্থাপনে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। তাছাড়া ঠিকমত সার পাওয়া যায় না। পচনশীল হওয়ায় এই পান সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে নেই কোন হিমাগার। পানের উপর আলাদা কোন কৃষি ঋণ দেয়া হয়না। পান চাষিদের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় নানা সমস্যায় জর্জরিত এই ফসল চাষের সাথে জড়িতরা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শাহ মো. আকরামুল হক জানান, ঝিনাইদহের পান এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ঝিনাইদহের পান চাষে কৃষি বিভাগ থেকে সম্ভাব্য সব রকমের প্রযুক্তি সহায়তা ও কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এমএএস/পিআর