বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী জাহাজ চালুর পরিকল্পনা


প্রকাশিত: ০৩:৫৩ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজের জন্য বাংলাদেশিদের ভারত যেতে হয়। তেমনিভাবে ভারতীয়দেরও কাজের জন্য বাংলাদেশে আসতে হয়। যাতায়াতে বাস ও ট্রেনের সুবিধা থাকলেও নৌপথ বা সমুদ্রপথে আসা-যাওয়ার কোনো সুযোগ বর্তমানে নেই।

তাই বাস ও ট্রেনের পাশাপাশি নৌপথ বা সমুদ্রপথে যাত্রী ও পর্যটক বহনকারী জাহাজ চালুর চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা করছে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার।

বিদ্যমান ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেডের (পিআইডব্লিউটিপি) আওতায় ভারতের আসাম, কলকাতা থেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, আশুগঞ্জ, আরিচা ও সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি বন্দর পর্যন্ত যাত্রী বহনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এ লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রটোকল চুক্তি সংশোধন করার জন্য দু’দেশের মধ্যে চলমান আলাপ-আলোচনা বেশ এগিয়েছে। দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে রাখা হচ্ছে। বর্তমানে নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে নৌযানে শুধু মালামাল পরিবহন করা হয়। নৌ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মানুষ ঘুরতে চায়, প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে চায়। এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত হতে পারে- সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি নৌমন্ত্রী।

নৌমন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে নৌপথে যাত্রীবাহী বা পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলে আসছে। ভারতের আকবর, চড়–ইভাতি, সুতাপাসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিকমানের পর্যটকবাহী জাহাজ রয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত যাত্রীবাহী জাহাজের সংখ্যা হাজারের বেশি হলেও মানসম্মত পর্যটকবাহী জাহাজ নেই।

তবে কতগুলো জাহাজ চলবে, কতসংখ্যক যাত্রী বা পর্যটক যাতায়াত করবে এ সংক্রান্ত কোনো গবেষণা করেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য এজেন্ডায় রাখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নৌপথে যাত্রী পরিবহনে দুই দেশের নৌবন্দরে বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন হবে। এছাড়া বন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। দুই দেশ সম্মত হলে ভারতের কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি নদীবন্দরের সরাসরি যাত্রী ও পর্যটক চলাচলের সুযোগ হবে।

ভারতের গোহাটি থেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত জাহাজ আসতে সময় লাগবে ৪-৫ দিন। জাহাজের গতিবেগ হবে ১৩-১৪ নটিক্যাল মাইল। বর্তমানে চলাচলকারী মালবাহী জাহাজ একই পথে দ্বিগুণ সময় লাগে। কলকাতার হলদিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ বন্দর আসতে মালবাহী জাহাজের ৮-১০ দিন সময় প্রয়োজন হয়।

নৌপ্রটোকলের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মো. শফিকুল হক বলেন, দুই দেশের সরকার সম্মত হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই যাত্রীবাহী জাহাজ চালু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পর্যটকদের সুবিধার্থে পোর্ট অব কলভুক্ত নৌবন্দরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের বেশিরভাগ নৌবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য এসব বন্দরে আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে।

তিন আরও বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে ‘পোর্ট অব কল’ভুক্ত নৌবন্দরের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। চাঁদপুর, আরিচা ও বরিশাল নৌবন্দরকে এর আওতায় আনা হতে পারে। এসব বন্দর ব্যবহার করে পর্যটকরা তাদের পছন্দের এলাকায় সহজেই ভ্রমণ করতে পারবেন।

নৌপ্রটোকলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ বন্দর পোর্ট অব কলের আওতাভুক্ত। এ বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে আসা যাত্রী বা পর্যটকরা ঢাকাসহ যেকোনো অঞ্চলে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। চাঁদপুর নৌবন্দরকে পোর্ট অব কলভুক্ত করা হলে ওই বন্দর দিয়ে চট্টগ্রাম, পার্বত্য তিন জেলা, কক্সবাজারসহ পূর্বাঞ্চলের সব এলাকায় সহজেই যেতে পারবেন। একইভাবে বরিশাল বন্দর ব্যবহার করে কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চল এবং আরিচা বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে।

বর্তমানে নৌপ্রটোকলের আওতায় আসা-যাওয়ার উভয়দিকে তিনটি রুটে মালবাহী জাহাজ চলাচল করছে। নতুন চুক্তি হলে এসব রুটে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের সুযোগ পাবে। রুটগুলো হচ্ছে প্রথমত কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল-চালনা-খুলনা-মংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবড়া-পান্ডু-শীলঘাট।

দ্বিতীয়ত কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল-চালনা-খুলনা-মংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-ভৈরব বাজার-আশুগঞ্জ-আজমীরীগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ।

তৃতীয়ত ধুলিয়ান-গোদাগাড়ী-রাজশাহী-করিমগঞ্জ-জকিগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ-শেরপুর-মরকুলি-আজমীরীগঞ্জ-আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার-নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারি-ডুবরি-পান্ডু-শীলঘাট। তবে এসব রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করে নাব্য সংকট দূর করতে হবে। সূত্র : যুগান্তর

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।