‘উঠবেন না, মহিলা সিট নেই’
রাজধানীতে যানজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ তো আছেই, এর সঙ্গে গণপরিবহনে যাতায়াতে নারীদের ভোগান্তিও দিন দিন দূর্বিষহ হয়ে উঠছে। নারী কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করেতে হয় প্রতিদিনই। নারী যাত্রীদের অভিযোগ, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার বা ফেরার সময় বাস হেলপাদের কমন বুলি ‘মহিলা সিট নেই’ আওড়িয়ে নারীদের উঠতে দেয়া হয় না।
প্রতিদিনই সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় এবং বিকেলে বা সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে কর্মজীবী মানুষের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও বাস না পাওয়ায় এবং সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে না পারায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এছাড়া বাসে ওঠা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ তো রয়েছেই। প্রতিদিনই অফিস টাইমে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনে উঠতে না পেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় নারীদের।
গণপরিবহনে ধাক্কাধাক্কি করে কোনোমতে উঠতে পারলেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের যাতায়াতের সময় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, উত্তরা, বনানী, মহাখালী ফার্মগেট, শাহবাগ, মতিঝিল, মুগদা, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডাসহ রাজধানীর সব বাস স্টপেজের প্রতিদিনের দৃশ্য এগুলো।
নারী যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানীর বড় বাসে কমপক্ষে নয়টি সংরক্ষিত আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু সংরক্ষিত আসন নারীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
মুগদা থেকে ধানমন্ডি যেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তসলিমা আক্তার রন্টি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ভিড়ের কারণে বাসে উঠতে পারছিলেন না তিনি। বাসে না ওঠার সুযোগ না পাওয়ার বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার জরুরি ক্লাস আছে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছি না। একজন পুরুষের যেমন তাড়াতাড়ি কর্মস্থলে পৌঁছতে হবে, ঠিক তেমনি একজন নারীরও ঠিক সময়ে পৌঁছতে হয়। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, এসব কারণে মাঝে মাঝে সিএনজি অটোরিকশাতে করে যাই। কিন্তু প্রতিদিন তো আর এত টাকা খরচ করে যাওয়া সম্ভব না, এছাড়াও অন্য অনেক নারীদের তো সে সামর্থ নেই।
তসলিমা আক্তার রন্টির পাশে থাকা আরেক কর্মজীবী নারী শেফালি আক্তার তুরিন বলেন, একদিকে ঘর-সংসার, অন্যদিকে চাকরি। ঘরের কাজ সামলে মহিলারা যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছার জন্য, তখনই গাড়ির হেলপারদের ডাক শোনা যায়, ‘মহিলা উঠবেন না, মহিলা সিট নেই’।
খিলগাঁও থেকে মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি হয়ে চলাচলকারী বাহন পরিবহনের চালক এরশাদ আলী এ বিষয়ে বলেন, আমাদের এ বাসে প্রচুর যাত্রী চলাচল করেন কিন্তু পুরো বাসটাতে মহিলাসহ সংরক্ষিত আসন মাত্র ৯টা। যদিও সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি মহিলা যাত্রীও হয় অনেক বেশি। খুব বেশি যাত্রী হওয়ায় অনেক সময় আমরা মহিলা যাত্রী তুলি না। অবশ্যই উনারাও (মহিলা) দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন তাই উনাদের জন্যও যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা দরকার।
বাসের জন্য অপেক্ষমান আরেক যাত্রী সরকারি চাকরিজীবী রেহেনা আক্তার বলেন, নগরীতে বসবাসরাত কয়েক লাখ নারীকে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। কর্মজীবী নারীদের ভোগান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) যে ‘মহিলা বাস সার্ভিস’ চালু রয়েছে তাও পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে বাধ্য হয়েই অন্য গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করে বাসে ওঠার যুদ্ধ করতে হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, মহিলাদের জন্য আলাদা পর্যাপ্ত বাস সার্ভিস চালু করা খুবই জরুরি। যদিও অফিস টাইমের আগে এবং অফিস টাইম শেষে ছাড়া মহিলা বাসগুলোতে আশানুরূপ যাত্রী না পাওয়ায় বাস চালানোর খরচ পর্যন্ত উঠছে না। গণপরিবহনে সংরক্ষিত নারী সিটের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় আনা খুব জরুরি।
অন্যদিকে গণপরিবহনে নারীর ভোগান্তি লাঘবে পুরুষরা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন তাহলে নারীদের যাতায়াতের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
এএস/বিএ/এএম