সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই


প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
 
তিনি জানান, গতকাল (সোমবার) দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আইসিইউতে তিনি স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছিলেন। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে ভেন্টিলেটর মেশিনে (কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্র) দেয়া হয়।

গত চার মাস আগে লন্ডনে চিকিৎসাকালে দেশের অন্যতম সেরা এই লেখকের দেহে ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসায় তাকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। চিকিৎসায় উন্নতি না হাওয়ায় লন্ডনের চিকিৎসকরা শামসুল হককে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) তিনি জ্বর নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন থেকেই ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের কনসালটেন্ট ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্তের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার শয্যাপাশে স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তার স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক একজন লেখিকা ও মনোচিকিৎসক।

সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে শিল্প ও সাহিত্য অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

পুরস্কার
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া আদমজী সাহিত্য পুরস্কার-১৯৬৯, অলক্ত স্বর্ণপদক-১৯৮২, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার-১৯৮৩, কবিতালাপ পুরস্কার- ১৯৮৩, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক-১৯৮৩, একুশে পদক-১৯৮৪, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক- ১৯৮৫, পদাবলী কবিতা পুরস্কার-১৯৮৭, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক- ১৯৯০, টেনাশিনাস পদক-১৯৯০, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গীতিকার মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার- ২০১১।

উপন্যাস
এক মহিলার ছবি (১৯৫৯), অনুপম দিন (১৯৬২), সীমানা ছাড়িয়ে (১৯৬৪), নীল দংশন (১৯৮১), স্মৃতিমেধ (১৯৮৬), মৃগয়ায় কালক্ষেপ (১৯৮৬), স্তব্ধতার অনুবাদ (১৯৮৭), এক যুবকের ছায়াপথ (১৯৮৭), স্বপ্ন সংক্রান্ত (১৯৮৯), বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ (১ম খণ্ড-১৯৮৯, ২য় খণ্ড- ১৯৯০), বারো দিনের শিশু (১৯৮৯), বনবালা কিছু টাকা ধার নিয়েছিল (১৯৮৯), ত্রাহি (১৯৮৯), তুমি সেই তরবারী (১৯৮৯), কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন (১৯৮৯), শ্রেষ্ঠ উপন্যাস (১৯৯০)।

কবিতা
একদা এক রাজ্যে (১৯৬১), বিরতিহীন উৎসব (১৯৬৯), বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা (১৯৭০), প্রতিধ্বনিগণ (১৯৭৩), অপর পুরুষ (১৯৭৮), পরাণের গহীন ভিতর (১৯৮০), নিজস্ব বিষয় (১৯৮২), রজ্জুপথে চলেছি (১৯৮৮), বেজান শহরের জন্য কোরাস (১৯৮৯), এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি (১৯৮৯), অগ্নি ও জলের কবিতা (১৯৮৯), কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে (১৯৯০),   আমি জন্মগ্রহণ করিনি (১৯৯০), তোরাপের ভাই (১৯৯০), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯০), রাজনৈতিক কবিতা (১৯৯১), ধ্বংস্তূপে কবি ও নগর (২০০৯)।

প্রবন্ধ
হৃৎ কলমরে টানে (১ম খণ্ড-১৯৯১, ২য় খণ্ড-১৯৯৫)।

এমইউ/আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।