৭ বছর পর ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে


প্রকাশিত: ০৫:৫৮ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

বেগম খালেদা জিয়ার নয়নের মণি আরাফাত রহমান কোকো আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরলেন। মা-ছেলের সাত বছরের ব্যবধান ঘুচে লাশ হয়ে ফিরলেন তিনি।

২০০৮ সালের ১৯ জুলাই শনিবার। বেলা ১টা ২৯ মিনিট। প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডের পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন অসুস্থ আরাফাত রহমান কোকো। তারপর একে একে কেটে গেছে সাতটি বছর। নানা আইনি জটিলতা আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সুস্থ হয়ে প্রিয় মায়ের সান্নিধ্যে ফেরা হয়নি তার। প্রিয় দেশ, প্রিয় মানুষদের ছেড়ে নির্বাসনেই থাকতে হয়েছে বিদেশের মাটিতে। অবশেষে প্রিয় সেই মাটি, পরম প্রিয় মমতাময়ী সেই মায়ের কোলে ফিরে আসার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে তার, তবে লাশ হয়ে।

জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতার আরাফাত ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই ছেলেকে ঘিরেই ছিল খালেদা জিয়ার জীবনযাপন। পরে রাজনীতিতে আসেন তিনি, এক সময় আসেন তারেকও। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ষড়যন্ত্রে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় জিয়াপরিবার। তিন সদস্য তিন দেশে বসবাস করেন বাধ্য হয়ে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে, তারেক লন্ডনে, কোকো মালয়েশিয়ায়।

২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মায়ের সাথেই গ্রেফতার হয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই সাময়িক মুক্তি দেয়া হয় তাকে। চিকিৎসাধীন কোকো বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বেরিয়ে আসেন। বিকেল ৫টার দিকে তাকে চিকিৎসার জন্য দুই মাসের সাময়িক মুক্তির নির্দেশ দেয় ওয়ান-ইলেভেন সরকার।

মুক্তির পর রাস্তার ধারে অপেমাণ নেতাকর্মী ও পথচারীদের অনেকে সদ্যমুক্ত কোকোকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। হাসপাতালের সামনে এবং আশপাশের রাস্তায় তখন যানজটের সৃষ্টি হয়। কোকো কারারী ও চিকিৎসক-কর্মচারীদের সাথে করমর্দন করে হাসপাতাল থেকে বিদায় নেন। ৫টা ৫৫ মিনিটে তাকে অক্সিজেন লাগিয়ে ঢাকা সেনানিবাস এলাকার বাড়ির উদ্দেশে হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোকো শহীদ মঈনুল সড়কের বাসায় পৌঁছেন। কোকোকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। দুই মেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এর এক দিন পর ২০০৮ সালের ১৯ জুলাই থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন আরাফাত রহমান কোকো। আর দেশে ফিরতে পারেননি। মামলা হয়েছে দেশে, দেয়া হয়েছে সাজা। আজ মানুষের দেয়া সব সাজার ঊর্ধ্বে কোকো।

কোকো যখন দেশে ফিরছেন, তখন অনেক কিছুই বদলে গেছে। বাবা-মায়ের সাথে যে বাড়িতে বেড়ে উঠেছিলেন, সেই বাড়িটিও আজ নেই। ৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসা মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ২০১১ সালে। এর পর থেকে গুলশানে যে ভাড়া বাসায় থাকতেন খালেদা, তাও বেশ কিছু দিন ধরে বিধিনিষেধে মোড়া। বাসা ছেড়ে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন কোকোর মা। মৃত্যুর সংবাদও এসেছে এখানে। শোকে বিহ্বল মা ছেলের মুখ দেখতে উন্মুখ। হৃদয়ে তার রক্তক্ষরণ।

এমএম/এএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।