যানজট হ্রাসের মহাপরিকল্পনায় মন্ত্রিসভার সায়


প্রকাশিত: ০৯:১৭ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৬

বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ যানজটপূর্ণ শহর। আগামী ২০ বছরে এর জনসংখ্যা প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়বে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে যানবাহনের চাহিদা ও সংখ্যা। নানা কাজে নগরবাসীর দৈনিক যাতায়াত (ট্রিপ) প্রায় ৭১ শতাংশ বাড়বে। এতে রাজধানীতে যানজটের তীব্রতা হবে দ্বিগুণ। এ পরিস্থিতি উত্তরণে যানজট হ্রাসের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার।

এ মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার যানজট হ্রাসে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) শীর্ষক এ মহাপরিকল্পনায় আগামী ২০ বছরে পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন তিনটি বৃত্তাকার সড়ক, ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে ও বেশকিছু সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০০৪ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০০৬ সালে তা অনুমোদন করে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ। তবে তা না মেনেই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে রাজধানীতে যানজট বেড়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে এসটিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চূড়ান্ত করা হয় আরএসটিপি। জাপানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এএলএমইসি করপোরেশন, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল লিমিটেড ও কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এর কাজ করে।

আরএসটিপি নিয়ে মন্ত্রিসভায় পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, এসটিপিতে তিনটি মেট্রোরেল ও তিনটি বিআরটিসহ বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করতে হচ্ছে। এজন্য ২০ বছরে বিনিয়োগ দরকার পড়বে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।

মেট্রোরেলের পাঁচটি রুটের মধ্যে বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান, যা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬) নামে পরিচিত। এটিকে উত্তরা থেকে আশুলিয়া ও মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

নতুন মেট্রোরেলগুলোর মধ্যে প্রস্তাবিত এমআরটি-১ গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে বিদ্যমান রেলপথ ধরে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত যাবে। এমআরটি-২ এর সম্ভাব্য রুট হবে আশুলিয়া থেকে শুরু করে সাভার, গাবতলী হয়ে মিরপুর রোড দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের (নগর ভবন) সামনে দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। এমআরটি-৪ নির্মাণ করতে হবে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। আর এমআরটি-৫টি হবে অনেকটা ‘ইউ’ আকৃতির। এটি নির্মাণ করা হবে ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর সড়ক, মিরপুর-১০, গাবতলী বাস টার্মিনাল, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিঙ্ক রোড পর্যন্ত।

এর বাইরে সড়ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণে ২৯০ কিলোমিটার প্রাইমারি (ধমনী) সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এসব সড়কে কোনো ধরনের ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে না। থাকবে না কোনো বাস স্টপেজ। আর জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোয় ধমনী সড়কের পাশাপাশি থাকবে ৪৭১ কিলোমিটার মাধ্যমিক সড়ক। এসব সড়ক বাস স্টপেজ, কার পার্কিংসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে।

সড়কের বাইরে পাটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এগুলো আশুলিয়া, মাওয়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকার দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখবে। আর ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে বিকল্প সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে তিনটি বৃত্তাকার (ইনার, মিডল ও আউটার) সড়ক নির্মাণ করতে হবে, যার দৈর্ঘ্য ৩১০ কিলোমিটার। এছাড়া আটটি রেডিয়াল সড়ক, বিদ্যমান বাস সার্ভিস উন্নয়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব থাকবে।

জানা গেছে, ২০ বছর মেয়াদি সংশোধিত এসটিপিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (২০১৬-২০২০) সবচেয়ে কম বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয় ধাপে (২০২১-২০২৫) বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেড়গুণ করতে হবে। আর তৃতীয় (২০২৬-২০৩০) ও চতুর্থ (২০৩১-২০৩৫) ধাপে বিনিয়োগ আড়াইগুণে উন্নীত করতে হবে। এক্ষেত্রে সড়ক খাতে গড়ে বিনিয়োগ মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। তবে মেট্রোরেল ও বিআরটি নির্মাণে ধাপে ধাপে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

এমইউএইচ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।