ঢাবিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সাইবার সেন্টারের বেশকিছু কম্পিউটার এখন অচল। এগুলো মেরামত না করায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সেন্টারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খসে পড়েছে সেন্টারের ছাদ ও দেয়ালের আস্তরণ।
কার্যক্রম বন্ধ থাকার ব্যাপারে টিএসসি সাইবার সেন্টারের সদ্যবিদায়ী পরিচালক ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, সাধারণত একটি কম্পিউটারের সর্বোচ্চ মেয়াদ ধরা হয় পাঁচ বছর। টিএসসি সাইবারের কম্পিউটারগুলো ১২ বছরের পুরনো। তাই এগুলো দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট চাহিদা মেটাতে টিএসসি এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে দুটি সাইবার সেন্টার রয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেরটি চালু থাকলেও এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে টিএসসির সাইবার সেন্টারটি।
২০০৩ সালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাইবার সেন্টারটি স্থাপন করা হয়। এ সময় ২৫টি কম্পিউটার নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এর পর ২০০৭ সালে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ায় আরো ১০টি কম্পিউটার সংযোজন করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ কম্পিউটারই এখন অকার্যকর। ছয়টি কম্পিউটার চালু হলেও তা দিয়ে কাজ করা যায় না বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারগুলো মেরামত না করায় ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে বন্ধ সেন্টারটির কার্যক্রম।
বরাদ্দের অভাবের কথা জানিয়ে সাইবার সেন্টারটির ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, কম্পিউটারগুলো অনেক দিন ধরে নষ্ট রয়েছে। এগুলো মেরামত করার জন্য ভিসি কার্যালয় বরাবর কয়েকবার লিখিতভাবে আবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সাইবার সেন্টারটির দেয়াল ও ছাদের আস্তরণ খসে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটির রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে সাইবার সেন্টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
কম্পিউটারগুলো অকেজো থাকায় বন্ধ রয়েছে সাইবার সেন্টার পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তির সেবা থেকে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে সেন্টারটি চালু করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট-সংক্রান্ত বিষয়গুলো উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দফতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। টিএসসি সাইবার সেন্টার চালুর উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হোসেন বলেন, ‘টিএসসিতে একটা সাইবার সেন্টার আছে, এটা জানি। তবে কে বা কারা চালায়, আমি সে বিষয়ে কিছু জানি না। কোন দফতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সে বিষয়ে অবগত নই। কোনো ধরনের ফাইলপত্রও পাইনি। একটা বিষয়ে না জেনে তো উদ্যোগ নেয়া যায় না।’
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সাইবার সেন্টারে রয়েছে ২৩টি কম্পিউটার। সুইস ভেঙে যাওয়ায় এক মাস ধরে ১০টি কম্পিউটার অকার্যকর রয়েছে। দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রাজীব আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, কম্পিউটারগুলো অনেক ধীরগতিতে কাজ করে। চালু হতেই ৫-১০ মিনিট সময় লেগে যায়।
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারছি না। সাইবার সেন্টারের তত্ত্বাবধায়নকারীরাই ভালো বলতে পারবেন।’ বণিক বার্তা