বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচারে যাবজ্জীবনের বিধানে মন্ত্রিসভার সায়
ইলেকট্রনিক মাধ্যম বা ইন্টারনেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মিথ্যাচার অথবা বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের অপপ্রচার চালালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কিছু ধারার সমন্বয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৬ গঠন করা হয়েছে। নতুন এ আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আদালতের নিষ্পত্তিকৃত কোনো বিষয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
নতুন আইনে সাইবার পরিকাঠামো ভেঙ্গে বা হ্যাক করে কেউ অপরাধ করলে অতিগুরুত্বপূর্ণ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এই অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর, সর্বনিম্ন ২ বছর কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের সম্মুখীন হতে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ধারা ১০ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার, মোবাইল ও ডিজিটাল ডিভাইস সংক্রান্ত জালিয়াতি করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া কম্পিউটার বা মোবাইলে হুমকি সংক্রান্ত অপরাধেও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান শফিউল আলম। তবে অপরাধের ধরন বুঝে শাস্তি কমানো-বাড়ানোর জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে চূড়ান্তভাবে আইনটি পাস করা হবে।
মোহাম্মদ শফিউল আলম আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১২ ধারায় প্রতারণা এবং ছদ্মবেশ ধারণ বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে পরিচয় গোপন করে, অন্য কারো পরিচয় ধারণ বা অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য নিজের নামে ব্যবহার করলেও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সচিব জানান, নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন মহাপরিচালক। তিনি জরুরি মুহূর্তে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
এছাড়া ১৫ ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অখণ্ডতা বিঘ্নিত বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিনষ্ট করাসহ সাইবার সন্ত্রাসের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন দুই বছর, ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোনো ব্যক্তি যদি কারো অনুমতি ছাড়া গোপনে ছবি তুলে প্রকাশ করে তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ১৮তে পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছর, সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মানহানি, মিথ্যা, অশ্লীল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছর, সর্বনিম্ন দুই মাস কারাদণ্ড, ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এমইউএইচ/এমএমজেড/এনএফ/আরআইপি