১৫ দিন সংকটে স্কুলটি


প্রকাশিত: ০৭:৫৭ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

গুলশান মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনেই অবস্থিত। গত ৩ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল।

দেশে চলমান অবরোধের কারনে রাজধানীর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যাক্রমে স্থবিরতা দেখা দিলেও গুলশান কার্যালয়ের পাশেই এই প্রতিষ্ঠানটি হওয়ার কারনে ভয়াবহ সংকটে পড়তে হয়েছে এই স্কুলটিকে।

গত ১৫ দিন ধরে খালেদা জিয়াকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেয়ায় এই এলাকায় মোতায়ন করা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ফলে ৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল অঘোষিত ছুটি। স্কুলের পক্ষ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবককে বার বার মোবাইল করা হলেও বেশিরভাগই তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাননি। ফলে নতুন বছরের শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খেতে হলো প্রতিষ্ঠানটিকে।

স্কুলের দারোয়ান আবদুস সামাদ জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীতে বেশিরভাগ বাচ্চারাই ভীতু, স্কুলের প্রধান ফটকের সামনেই এত পুলিশ দেখে আতঙ্কে অনেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। স্কুল খোলা থাকলেও প্রায় ৬০/৭০ ভাগ শিক্ষার্থী এই কয়েকদিন স্কুলেই আসেনি।

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র রােহিতুল ইসলামের মা রোকসানা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চলমান অবরোধের কারনে মহাখালী থোকে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে আসতে অনেক সমস্যা হয়েছে।  কখন যে কি হয়ে যায়। সব সময় একটা আতঙ্ক ও ভয় কাজ করতো।

আরেকজন শিক্ষার্থী তাহমিনার মা থাকেন বাড্ডাতে। তিনি জানান, স্কুলে আসার পথে পুলিশের অনেক চেক পোস্ট। তাই বাচ্চা ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না। অনেক বুঝিয়ে তিনি তার সন্তানকে কয়েকদিন স্কুলে নিয়ে এসেছিলেন।

নতুন বাজার এলাকা থেকে তার বাচ্চাকে নিয়ে আসেন বেগম তাসলিম। তিনি জানান, স্কুলে প্রবেশ পথে পুলিশ যেভাবে দাড়িয়া থাকতো। এরকম পরিস্থিতির কারণে তার বাচ্চা স্কুলে আসতে চায় না।

স্কুল শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানান, পুলিশের ব্যারিকেড ৮৬ নম্বর রোডের আরেকটু ভিতরে পাঁচ হাত এগিয়ে দিলে স্কুলের প্রবেশ পথ বাধা থেকে রক্ষা পেতে। সবাই ভয়-আতঙ্ক ছাড়ায় স্কুলে আসতে পারতো। পুলিশ স্কুলে আসার সময় কিছু না বললেও অনেকের মাঝে ভয় আতঙ্গ কাজ করে। চলমান এই সমস্যার কারনে তিনি নিজেও প্রতিদিন শাহজাদপুর থেকে হেঁটে আসছেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি অভিভাবককে ফোন করে স্কুলে তাদের বাচ্চাকে নিয়ে আসার অনুরোধ করছি কিন্তু অনেকেই অনিহা প্রকাশ করছেন। পড়াশোনা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ প্রয়োজন বলেও দাবি করেন তিনি।

গুলশান মডেল স্কুল ও কলেজে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন আলী আশরাফ। তিনি জানান, এই এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার কারনে শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক প্রভাব পড়ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য দুইবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়নি। কিন্তু চলমান এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির কারনে এবার আমাদেরকে দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক অভিভাবক আছেন যারা পুলিশের সামনে আসতেই চায় না। ৬ জানুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানে কেবলমাত্র প্রিন্সিপাল হওয়ায় আমাকেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীতো দুরের কথা অন্য কোন শিক্ষককেও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

তিনি জানান, গতকাল থেকে মোটামুটি ক্লাশ শুরু হয়েছে। তবে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম। অবরোধের কারনে সারা শহরে মূলত একই অবস্থা। তবে ভয়াবহ অবস্থা এখানে। পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে কিছুটা শিথিল করেছি। কঠিন এই প্রতিযোগীতায় ক্লাশ বন্ধ থাকলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। এবছর আমাদের স্কুল আটটা বৃত্তি পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন‌্য চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, গতরাত পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে ও আশে পাশের এলাকায় প্রচুর সংখ্যক পুলিশেল অবস্থান ছিল। তবে সোমবার সকাল থেকেই নিরাপত্তা পুরোপুরি শিথিল করায় আজ স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা গত ১৫ দিনের তুলনায় বেশি দেখা গেছে।

এমএইচ/এআরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।