‘ঘর এ্যালা মাটির তলত’


প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ১০ আগস্ট ২০১৬

‘আর কতকাল বাঁচি থাকি? মানুষের কান্টেই আর কত হাত পাতি? মানুষ তো এ্যালা আগের মতো নাই। চাইলেও কাউ দিবার চায় না। মেয়ের কান্টে থাকি। মাইনষের বাড়ি কাজ করি খাই। আর মন টানে না। মরণই ভাল। ঘর এ্যালা মাটির তলত।’

বুধবারের বিকাল। কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলার রমনা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাজেরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজের পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণ নিতে ছুটে আসেন সেখানে।

জীবনের ঘানি টেনে অতিষ্ঠ এই নারীর জীবনে সুখের নাগাল কখনই মেলেনি। পরিষদের পাশেই ভট্টাপাড়া গ্রামে বিয়ে হয় প্রায় ৫০ বছর আগে। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামীর মৃত্যু হয়। সেটাও স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই বছর পরের কথা। জীবনের পথচলা যেন এখানেই থেমে যাওয়া। ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে অথৈ সাগরে জীবন তরী ভাসিয়ে দিয়েছেন প্রায় সাড়ে চার দশক আগে। আজও সে তরী তীরে ভেড়াতে পারেননি বৃদ্ধা হাজেরা।

যৌবনের যে বেলায় সংসার সাজানোর কথা, সে বেলায় পরের ঘরের বাসন-কোসন মাজতে শুরু করেন। কাজ করছেন এখনও। ঘরহীন, সংসারহীন হাজেরা মেয়েদের নিয়ে দীর্ঘ সময় পরের বাড়িতেই থেকেছেন। পরের বাড়ি কাজ করেই দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। কোমর বেঁকেছে বহু বছর আগে। এক চোখ পুরোই অন্ধ। অন্যটিও আর আগের মতো কাজ করে না। রাত কাটে বড় মেয়ের বাড়িতে।

sabu

তবে মেয়েদের স্বামীর অবস্থাও অনেকটাই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ গোছের। মেয়েদের সংসার চলে না এবং সে সংসারে ভরসা করা যায় না তা বোঝেন এই বয়সেও।

বলছিলেন, আর পারি না। জীবনটাই তো পরের বাড়িতে কাজ করে শেষ করে দিলাম। এখনও পরের বাড়ি কাজ করেই খাই। কি করব? উপায় তো নাই। বড় মেয়ের বাড়িতে রাতে থাকি। সবই তো বুঝি। মেয়ের ঘরে তিন ছেলে। জামাই কামলা দিয়ে সংসার চালায়। অভাবের সংসারে তো বোঝা হয়ে থাকা যায় না।

এবারেরর বন্যায় পাশের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে জানিয়ে বৃদ্ধা বলেন, সবার সংসারেই অভাব। মানুষের বাড়িতেও আর কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সাহায্যের জন্য পথ চেয়ে থাকি। কেউ কিছু দিলে, তাতেই খুশি।

এএসএস/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।