জুলাইয়ে সারাদেশে নিহত ৬৬৫ : নিখোঁজ ৫৮
চলতি বছরের জুলাই মাসে সারাদেশে জঙ্গি হামলা, ক্রসফায়ার, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আত্মহত্যা, সীমান্ত হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা ঘটনায় নারী-শিশুসহ ৬৬৫ জন নিহত এবং ৫৮ জন নিখোঁজ হয়েছে।
এরমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ২০ জন, ধর্ষিত হয়েছেন ২৮ নারী ও শিশু এবং পারিবারিক কলহে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র গত জুলাই মাসেই ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা ( আহত ও নিহত) মোট ৩ হাজার ৫৮৯ জন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) পক্ষ থেকে কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার ফাতেমা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে এই তথ্য দেন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে জঙ্গি হামলা ও ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। এছাড়াও ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় হতাহত, শিশু ও গণধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে হতাহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুনসহ নানা সহিংস ঘটনা ছিল উল্লেখ করার মত।
সংস্থার জুলাই মাসের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত নিম্নরুপ:
ক্রস ফায়ারে নিহত ২০ : শুধু ক্রসফায়ারেই জুলাই মাসে ২০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের হাতে ১৮ জন এবং র্যা ব কর্তৃক ২ জন নিহত হয়।
জঙ্গি হামলায় নিহত ৪৩ : একই মাসে গুলশানের আর্টিসান রেস্তোরাঁ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও ঝিনাইদহে জঙ্গি হামলা হয়। এছাড়া রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানেও জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মোট ৪৩ নিহত হয় । এর মধ্যে জঙ্গিদের হাতে ১৭ জন বিদেশি ও ৩ জন পুলিশ নিহত হয়।
আত্মহত্যা : এ মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৮ জন। এর মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী। বছরের প্রথম সাত মাসে মোট ২৪৯ জন আত্মহত্যা করে। সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৭৮ জন ও সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে ৪ জন। এরমধ্যে মুন্সীগঞ্জে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের মামলা করায় মোসলেম নামে ষাট বছরের এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেন।
যৌতুক : জুলাই মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ১নারীকে। নির্যাতনের শিকার হয় ১১ জন।
পারিবারিক কলহ : পারিবারিক কলহে জুলাই মাসে নিহত হন ১৯ জন, এর মধ্যে পুরুষ ৮ জন, নারী ১১ জন।। তাছাড়া এ সময় স্বামীর হাতে নিহত হন ১৬ নারী।
খুন : সন্ত্রাসী কর্তৃক জুন মাসে নিহত হন ১১৭ জন, আহত হয় ৮৭ জন। ১৫ জুলাই টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকায় নার্গিস বেগম নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৫ জুলাই ৫ ঘন্টার ব্যবধানে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের দুইনেতাকে গুলি ও কুপিয়ে এবং ২১ জুলাই রাজধানীতে প্রকাশ্যে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
অন্যান্য সহিংসতা : অন্যান্য ঘটনার মধ্যে, মাদকের প্রভাবে নিহতের সংখ্যা ৭ জন, আহত হয় ৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় এ মাসে ২৩৪ জন নিহত এবং ৫২৮ জন আহত হয়। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎস্পৃস্টে এবং বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৩৪ জনের।
এছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ৫ জন এবং বোমা বিস্ফোরণে ৫ জন আহত হয় । ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৪ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গণগ্রেফতার করা হয় ৮৩৫ জনকে। শ্রমিক অসন্তোষে ও আন্দোলনে আহত হয় ২ শ্রমিক। এ মাসে নিখোঁজ হয়েছে ৫৮ জন।
সংস্থার দাবি মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয়, অন্যদিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।
আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মানবাধিকার লংঘনের ৭৯ ধরণের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে।
উল্লেখ্য এই জুলাই মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষণা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ৩৫৮৯ জন।
এফএইচ/এমএমজেড/এবিএস