দেশের ব্যাংকিং খাত সংকটাপন্ন : উন্নয়ন অন্বেষণ


প্রকাশিত: ০৯:৩২ এএম, ২৬ জুলাই ২০১৪

স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ এর মাসিক ’বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ ২০১৪ সালের জুলাই সংখ্যা মতে, দেশের ব্যাংকিং খাত সংকটাপন্ন ফাঁদে আটকে পড়েছে। একদিকে উচ্চ সুদের হার, অধিক তারল্য, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস দেশের মোট বিনিয়োগের ওপর চাপ তৈরি করছে, অন্যদিকে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ওপর রাজনৈতিক ও পারিবারিক আধিপত্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢিলেঢালা নজরদারি, শিথিল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং উপর্যপুরি কেলেঙ্কারি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সংকট তৈরি করছে ও অংশীদারদের লাভ কমিয়ে দিচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ব্যাংকিং খাতে নেয়া উদারিকরণ নীতিসমূহ উচ্চ সুদের হার ও সুদের হারের ব্যবধান কমাতে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করতে পারে নাই, অন্যদিকে সরকারি ও ব্যক্তিখাতে ব্যাংকের ওপর অধিকৃত পরিচালন ব্যবস্থা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অদূরদর্শিতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং ঋণ খেলাপির মতো সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।

ঝুঁকি অব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় ব্যাংকিং খাত কাঠামোগত জঠিলতায় আটকে পড়েছে, যা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি করে ইকুইটির আয় হার হ্রাস করেছে এবং পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে।

নিম্ন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে ’উন্নয়ণ অন্বেষণ’ পরিচালন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার অভাব, ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল নজরদারি, উচ্চ সুদের হার এবং সরকারি রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপকে দায়ী করছে।

’উন্নয়ন অন্বেষণ’ উল্লেখ করছে যে, মোট দেশজ উৎপাদন ব্যাংকিং খাতের অবদান ছিল ২০১১-১২ সালে ২.৬২, ২০১২-১৩ সালে ২.৭৩ এবং ২০১৩-১৪ সালে ২.৮৪ শতাংশ এবং ঋনাত্বক প্রবৃদ্ধির হার দেখা যাচ্ছে যা ২০১১-১২ সালে ছিল ১৭.৬১, ২০১২-১৩ সালে ১০.৮৭, ২০১৪-১৫ সালে ১০.৫৩ শতাংশ অর্থাৎ দুই অর্থবছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি হার ৬.০৮ শতাংশ কমেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সুদের হার ব্যবধান এই বছরও বেশি রয়েছে; ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ৫.১৪ শতাংশ ছিল। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে এই ব্যবধান হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল এবং তারপর থেকে বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ঋণের বিস্তার ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র নির্দেশ করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে যে, ঋণের প্রবৃদ্ধির হারের নিম্নগতি বিনিয়োগ হ্রাস করবে, ফলে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হ্রাস করবে।

অভ্যন্তরীণ খাতে ২০১৪ সালের মার্চ নাগাদ ঋণের প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে ১১.৩২ শতাংশে দাঁড়ায়, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ১১.৮৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ১১.৪৭ শতাংশে দাঁড়ায় যা গত বছর ১২.৭২ শতাংশ ছিল। ২০১৪ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতিতে ১৬.৫ শতাংশ
লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল, যা তার আগের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার (১৫.৫ শতাংশ) চেয়ে ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।

ব্যাংকি খাতে বৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার দিকে নির্দেশ করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ দেখিয়েছে যে, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে নন পারফরমিং লোন (খেলাপি ঋণ) ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮.৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৫ শতাংশে উপনীত হয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে যে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তৃতীয় চতুর্থাংশ সময়ে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ৯২৮৩.৫০ কোটি টাকা, যা গত ৫টি চর্তুথাংশের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদি এই ধারা বজায় থাকে তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ ও পুনরুদ্ধারের প্রবৃদ্ধির হারে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে একটি হ্রাসমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে কৃষি ঋণ বিরতণের প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে -৬.৫৬, ৩.৬০ ও ২১.৮৬ শতাংশে উপনীত হয়েছে, অন্যদিকে কৃষি ঋণ পুনরুদ্ধারের হার বৃদ্ধির প্রবণতায় ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

সম্পদের আয় হার, যা ব্যবস্থাপনার দক্ষতাকে নির্দেশ করে, ২০১৩ সালে ০.৯ শতাংশ হয়েছে, যা ২০১২ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে ০.৬ ও ১.৩ শতাংশ ছিল। ইক্যুইটির আয় হার, যা দ্বারা অংশীদারদের মুনাফা পরিমাপ করা হয়, ২০১৩ সালে ১০.৮ শতাংশে উপনীত হয় যা ২০১২ সালে ৮.২ শতাংশ ছিল। ২০১৪ সালে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।