‘আইছিরে আইছি, ভালো জায়গায় আইছি’
‘আইছিরে আইছি। ভালো জায়গায় আইছি।’ প্রিজনভ্যান থেকে শুধু এতটুকুই ভেসে এল। মুহূর্তেই যেন কণ্ঠস্বর বিলীন হয়ে গেল। ওদের চোখেমুখে উল্লাস। ভ্যানের লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে দাঁতগুলো চকচক করছে। কেউ কেউ হাত নেড়ে জানান দিচ্ছে তাদের অাগমনের বার্তা।
বলছিলাম ঢাকার কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারের দুপুর বেলার এক মুহূর্তের কথা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের শুক্রবার সকাল থেকে নতুন এই কারাগারে অানা হচ্ছে।
কয়েদি হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে গোটা সড়কে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও প্রিজনভ্যানে অাসার মুহূর্তে নিরাপত্তা অারও বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জেল গেটে প্রবেশের অাগেই পুলিশের সতর্ক অবস্থান। মিডিয়া কর্মীদের তৎপরতাও ঠিক অন্যরকম। প্রিজনভ্যানের বহরের অাগে-পিঁছে পুলিশ-র্যাবের সাইরেন বাজানো ডজন খানিক গাড়ি।
এমন আবেগঘন মুহূর্তে যখন কয়েদিদের ভ্যান রাস্তা ছেড়ে মোড় নিচ্ছে, তখন ভ্যানের ভেতর থেকেই হই-হুল্লড় করছেন কয়েদিরা।
লোহার শিক আর জালের ফাঁক দিয়ে কয়েদিদের হাত নেড়ে জানান দেয়ার বিষয়টি উপস্থিত সবাইকে আপ্লুত করছিল। মনে হচ্ছিল, এত কাছে, তবুও যেন কত দূরে!
কয়েদিরা কেউ মামা, কেউ ভাই বলে সম্বোধন করে হাঁক ছেড়ে বলছেন, ‘ভালো অাছেন অাপনেরা। অামরা ভালো অাছি।`
কেউ বলছে, `আইয়া পড়ছিরে।’
ভাসা ভাসা শব্দ। কিছু বোঝা যায়, কিছু বোঝা যায় না। অমন ক্ষীণ শব্দের বাক্যমালা নিয়েই ভ্যানগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে নতুন কারাগারের ভেতরে। হয়ত ভিতরে প্রবেশের পর সেই ক্ষীণ শব্দগুলোও অার বাইরে অাসবে না। চোখে পড়বে না লোহার শিকে হাত রেখে বিশেষ অাঁকুতি প্রকাশের ভঙ্গি।
ভালো থাকার প্রত্যয় নিয়ে ওদের নতুন কারাগারে ঠাঁই মিলছে। ভালো থাকুক ওরা। ভালো থাকুক কারাগারেও।
এএসএস/এআরএস/পিআর