দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ চুক্তি ২৬ জুলাই
প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করবে বাংলাদেশ। আগামী ২৬ জুলাই এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই হবে সব থেকে বড় ঋণচুক্তি।
বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিতে যাচ্ছে রাশিয়া। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
সূত্র জানায়, চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া যাচ্ছেন। দলের বাকী সদস্যরা হলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইআরডি সচিব মেজবাহ উদ্দীন, একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফায়জুল্লাহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ পারমাণু শক্তি কমিশন ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। এর মোট নির্মাণ ব্যয়ের ৯০ শতাংশ ঋণ হিসাবে দিচ্ছে রাশিয়া। বাকী ১০ ভাগ অর্থাৎ এক দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার যোগান দেবে বাংলাদেশ। এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে দৈনিক দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। গত ২৫ মে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করে বাংলাদেশ-রাশিয়া।
এক দশমিক ৭৫ শতাংশের সঙ্গে লাইবর যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। ঋণের অর্থ ৩০ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। এ লক্ষ্যে গত ১৯ মে বাংলাদেশ-রাশিয়া প্রাথমিকঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। প্রাথমিক ঋণ চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য রাশিয়া নদীর পাড়ে একটি জেটি নির্মাণ করবে। যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য আনুষঙ্গিক অন্য কাজগুলোর দায়িত্বও নিয়েছে দেশটি।
এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য প্রায় এক হাজার ৯৫০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সরকারের তরফে বলা হয়েছে এই কেন্দ্রের জন্য ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির সর্বাধুনিক রিয়্যাক্টর ব্যবহার করবে রাশিয়া।
ইতোমধ্যে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ), ভারতের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাশিয়ান এ্যাটমিক এনার্জি রূপপুর পরিদর্শন করেছে। তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে সম্মতি দিয়েছে।
১৯৬১ সালে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার পরে ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় পাবনার রূপপুরকে। পরবর্তী সময়ে রূপপুর নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কার্যক্রম আর আগায়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেয়া উদ্যোগটি সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের আগস্টে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়। আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’।
রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, উৎপাদন, নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত যন্ত্রাংশ পরিবহন এবং গ্যারান্টি পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে।
রাশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৩ দফা আলোচনার ভিত্তিতে ৪৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৫৭৩টি উপ-অনুচ্ছেদের চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরী করবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এরপর মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হবে। ইতোমধ্যেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে সাত বছর। এ লক্ষ্যে গত ২১ জুন বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে লাইসেন্স প্রদান করেছে।
এমএমজেড/এমএস