গুলশান রেস্টুরেন্টে হামলা : আটক নেই তবে সন্দেহে ৪ জন
রাজধানীর গুলশান-২ এর হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা না হলেও জড়িত সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন চারজন। পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে রেস্টুরেন্টে হামলায় জড়িত সন্দেহে একজন জঙ্গিকে হেফাজতে রাখার বিষয় জানিয়েছিল সেনা সদর। হামলার পরদিন সেনা সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ঘটনায় একজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে জীবিত অবস্থায় আটক করা হয়েছে।
শুধু তাই নয় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকও বলেছিলেন, জড়িত দুজন গ্রেফতার রয়েছেন।
তবে আজ (বুধবার) দুপুরে কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকেদের বলেন, ‘আমাদের হেফাজতে কেউ নেই। তবে দুজন রেস্টুরেন্টে কর্মী ও দুজন জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, জিম্মি দশা থেকে বেঁচে যাওয়া দু’জন হলেন তাহমিদ খান ও হাসনাত রেজা করিম। তাদের আটক বা গ্রেফতার করা না হলেও সন্দেহাভাজন হিসেবে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কানাডা থেকে দেশে ফেরা তাহমিদ কেন ধানমন্ডির বাসায় বিশ্রাম না নিয়ে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসনাত করিম হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চাকুরিচ্যূত হয়েছিলেন। তিনিও স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ওই রেস্টুরেন্টে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় খেতে গিয়েছিলেন। ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তাকে সন্দেহজনক অবস্থায় দেখা গেছে। সেজন্য সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন তিনিও।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হলি রেস্টুরেন্টে রান্নাঘরের কর্মী জাকির হোসেন ওরফে শাওনকে শুক্রবার রাতেই আহত অবস্থায় আটক করা হয়। তিনি গুরুতর আহত হওয়ায় তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁকে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জাকিরের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের পরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনার আরেক সন্দেহভাজন রেস্টুরেন্টে কর্মী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং বিভাগের ডিআইজি এ কে এম শহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিইব ইত্যাদিতে আইএস কিংবা জঙ্গিবাদ সমর্থনে কোন ধরণের ভিডিও, ছবি, কোন বার্তা আপলোড, শেয়ার, কমেন্ট অথবা লাইক দেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
একইভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অফিসিয়াল মেইল থেকেও একই বার্তা পাঠানো হয়। যারা আইসিটি অ্যাক্ট অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। ও আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গুলশানে রেস্টুরেন্টে হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন নিহত এবং দুই পুলিশ সদস্য শাহাদাতবরণ করেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। নিহত সাতজন জাপানির মধ্যে ছয়জনই বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার পাঁচজনের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় উঠে আসে। সেই পরিচয় থেকে জানা যায়, ঢাকার স্বনামধন্য একটি স্কুলের একজন ছাত্র ও একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রও এই হামলায় জড়িত ছিলেন। তারা দুজনই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান।
জেইউ/এসকেডি