একটি শাড়ির জন্য নুরজাহানদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা


প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৬ জুন ২০১৬

আজিমপুর কবরস্থানের মূল ফটকের ঠিক বিপরীত দিকে স্থানীয় বেসরকারি রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জাকাতের শাড়ি বিতরণ করছেন। খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির গেটে ভিড় জমিয়েছেন আজিমপুর কবরস্থান এলাকার ফকির-মিসকিনরা। তাদেরই একজন বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম। দু`হাত দিয়ে ক্র্যাচে ভর করে ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারছিল না তিনি। ভিড় সামলাতে না পেরে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা প্রহরীরা লাঠি হাতে বার বার তেড়ে আসছিলেন। তবুও এক পা, দু`পা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নূরজাহান বেগম।
 
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নূরজাহান জানান, তার পরনের কাপড়টি পুরনো হয়ে গেছে। নতুন একটি শাড়ি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে শাড়ি নেয়ার চেষ্টা করলে তার ভাঙা কোমড় আরো ভেঙে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় ভেতরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন। তবে তিনি আশাবাদী একটি নতুন শাড়ি নিয়েই ঘরে ফিরবেন।

Nurzahan
 
শুধু নূরজাহান বেগমই নন, তার মতো অনেক নূরজাহানরা ঈদে একটি নতুন শাড়ির জন্য বিত্তবানদের গেটে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কারও ভাগ্যে শাড়ি জুটবে আবার কেউবা ভিড়ে আহত বা নিহত হবেন!

প্রতি বছর জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আহত ও নিহত হওয়ায় ঘটনায় জাকাতের শাড়ি বিতরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ জানানো হলেও তা কেউ রাখছেন না। আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনেও সেই একই দৃশ্য।

Nurzahan

শাড়ি বিতরণকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষ ভিড় করায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা কর্মীরা। তাদের লাঠির আঘাত ও বাঁশির হুইসেল না শুনে অনেকেই হুড়োহুড়ি করে সামনে এগিয়ে যায়। এ সময় রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজটের। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটক লাগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর মানুষ দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
 
পুলিশের নিরাপত্তা ছাড়া কেন এভাবে জাকাতের কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে? জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুজন কর্মকর্তা বলেন, রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্ণধার হাফিজুর রহমান বিষয়টি তাদের আগে থেকে জানাননি। তিনি কাছের লোকজনদের দিয়ে শাড়ি বিতরণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আরেকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাংবাদিক পরিচয় শুনে অন্যভাবে বলেন, এখানে জাকাতের কাপড় নয়, স্কুল-কলেজের গরিবদের মধ্যে চেয়ারম্যান সাহেব কাপড় চোপড় বিতরণ করছেন। ফকির-মিসকিনরা খবর পেয়ে ছুটে এসেছে।

Nurzahan

এমইউ/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।