১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে ইপিজেডের আগুন, দুই তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনে এখনো কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস

দীর্ঘ প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা রাতভর চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দ্রুত সবাইকে বের করে নেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। এটি বড় পাওনা। তাই হতাহতের ঘটনা নেই।

তিনি বলেন, ভবনটি বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতো। চারটি ফ্লোরে গুদাম ছিল। সেখানে ডাক্তারদের গাউন তৈরি হতো। দাহ্য পদার্থ পুড়তে সময় লেগেছে। ভবনটি দুদিকে খোলা। পাশের ভবন ছিল খুবই কাছে। তাই আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। ভবনটি কোড মেনে করা হয়নি৷ তাই ফায়ার ফাইটাররা পৌঁছাতে পারেননি।

‘আমাদের বড় সাফল্য, অন্য ভবনের এক-চতুর্থাংশ ক্ষতি হয়েছে। আগুন অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি। এর জন্য সবাই কাজ করেছি। ১৭ ঘণ্টা টিম হিসেবে কাজ করেছি।’

তিনি ইপিজেডের সব ভবন দ্রুত কমপ্লায়েন্স ভবনে রূপান্তর করে কার্যকারিতা সনদ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু কারখানা মালিকের নয়, দেশের জন্যও ক্ষতি। এ ধরনের ক্ষতি চাই না। সিজন খারাপ। দ্রুত আগুন লেগে যাবে। সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসুন।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।

ভবনটির কলাম, কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, এ ভবনে কেউ যেন না ঢোকে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভবনের সামনে ব্যানার দিতে অনুরোধ জানিয়েছি। সার্ভে করার পর ভবনটি অপসারণ করা হবে কি না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আগুন লাগার পর এলাকাটি কর্ডন করা এবং শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে আসা আমাদের প্রথম কাজ। ইনজুরি ও ক্যাজুয়ালিটি ছাড়া শ্রমিকদের বের আনা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর আগে ফায়ার কমপ্লায়েন্স সনদ নিতে হয়। এ ভবনও কমপ্লায়েন্সের আওতায় ছিল। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের ফায়ার ড্রিল (মহড়া) করানো হয়।

বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ফায়ার কনসালটেন্টের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বেলা দুইটার দিকে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিক্যাল কোম্পানির গুদামে আগুন লাগে। অ্যাডামস তোয়ালে, ক্যাপ এবং জিহং মেডিক্যাল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা। কারখানা ভবনটি সাততলা। দুটি কারখানার গুদামই সাততলায়, যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ব্যবহার করা হয় ফায়ার সার্ভিসের রোবটিক ইকুইপমেন্টও। অতি দাহ্য পদার্থ থাকায় বেগ পেতে হয় ফায়ার ফাইটারদের। রাতে ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহায়ক হয় বৃষ্টি।

সকাল সাড়ে সাতটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে। এখনো কাজ করছে ১৭টি ইউনিট।

এমআরএএইচ/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।