কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ড

নিচতলায় তীব্র আগুন-ছাদের গেটে তালা, ভবনে আটকে মারা যান ১৬ শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৯ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মিরপুরে পোশাককারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন নিহত হয়েছেন/ ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাককারখানা ও কসমিক ফার্মা নামের এক কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। সবার মরদেহ পোশাককারখানার ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ভবনের নিচতলায় আগুনের তীব্রতা থাকায় এবং ছাদে ওঠার দরজা দুটি তালা দিয়ে বন্ধ থাকায় অনেকেই ভবন থেকে বের হতে পারেননি। ফলে ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটকে আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে অগ্নিনিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানান।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পোশাককারখানা থেকে মোট ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন স্বেচ্ছাসেবক আহত হয়েছেন। তবে এই দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কেউ আহত হননি।

তিনি বলেন, মরদেহগুলো একে একে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। মরদেহগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয়েছে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া তাদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। চেহারা দেখে কিংবা অন্য কোনোভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

নিচতলায় তীব্র আগুন-ছাদের গেটে তালা, ভবনে আটকে মারা যান ১৬ শ্রমিক

ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে যে সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস উৎপন্ন হয়েছিল তা অত্যন্ত বিষাক্ত। আগুন লাগার প্রথম দিকেই ফ্লাশওভার হয়েছিল এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষাক্ত গ্যাসের কারণে আকস্মিকভাবেই হয়তো অনেকে সেন্সলেস হয়ে পড়েন, পরে তারা মারা যান।

আরও পড়ুন

মিরপুরে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ১৬
এখনো নিখোঁজ অনেকে, স্বজনদের আহাজারি

‎তিনি বলেন, মরদেহগুলো ভবনের দোতলা এবং তিনতলার বিভিন্ন কর্নারে পাওয়া গেছে। তারা নিচেও নামতে পারেননি এবং ছাদে যাওয়ার যে গ্রিলের দরজা ছিল সেটি দুইটা তালা দিয়ে বন্ধ থাকার কারণে উপরেও যেতে পারেননি। ফলে দুই ও তিনতলায় আটকে মারা যান।

‎আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি ইউনিট এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে এবং এখনো কাজ করছে। পোশাককারখানা অংশের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অগ্নিনির্বাপণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। কেমিক্যাল গোডাউনটি এখনো নিরাপদ নয়। সেখানে এখনো আগুনের শিখা রয়েছে এবং ধোঁয়া উঠছে। এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগতে পারে।

তিনি বলেন, যতটুকু জানা গেছে কেমিক্যাল গোডাউনে ছয়-সাত ধরনের কেমিক্যাল ছিল। এখানে আগুন নেভানোর জন্য সাধারণত পাউডার, ওয়াটার, এনজাইম এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করা হচ্ছে।

কেমিক্যাল গোডাউন ও পোশাককারখানায় ‎কোনো ধরনের অগ্নিনিরাপত্তা ছিল না জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, এখানে কোনো ধরনের ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না এবং কোনো লাইসেন্সও ছিল না। স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞাসা করেও পোশাককারখানার নাম জানা যায়নি।

এর আগে, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের খবর আসে। খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে পাঁচ ইউনিট পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে আরও সাত ইউনিট যোগ দেয় আগুন নিয়ন্ত্রণে।

‎কেআর/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।