বেবিচক পরিচালকসহ তিন কর্মকর্তাকে দুদকে তলব


প্রকাশিত: ০৭:২০ পিএম, ১৫ জুন ২০১৬

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পরিচালকসহ (প্রশাসন) তিন কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরা হলেন পরিচালক (প্রশাসন) গৌতম কুমার ভট্টাচার্য, নির্বাহী প্রকৌশলী আছির উদ্দিন এবং সহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন। আগামী সোমবার (২০ জুন) নথিসহ তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে (দুদক)।

তিন কর্মকর্তাকে হাজির হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে গত সোমবার (১৩ জুন) বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি চৌধুরী বরাবর চিঠি দেয় দুদক।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন শরীফের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্ল্যেখ করা হয়, বেবিচকের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতি ও বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বক্তব্য গ্রহণ করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় সংযুক্ত নোটিশের ব্যক্তিদের আগামী সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে দুদকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে অনুসন্ধান কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

পরিচালক (প্রশাসন) গৌতম কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুদকে হাজির হওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত একটি চিঠি হাতে পেয়েছি। উপস্থিত হবো কিনা এ ব্যপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

জানা গেছে, দুদকের চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী আছির উদ্দিনের চাকরি শুরু থেকে অদ্যবধি যেসব স্টেশনে ছিলেন তার সময়কালসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের পদোন্নতি সংক্রান্ত যেসব প্রজ্ঞাপন ও নথি জারি হয়েছে তার সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেবিচকে দাখিল করা তার সম্পদ বিবরণীর সত্যায়িত ফটোকপি এবং উত্তরার ৫নং সেক্টরে জহুরা মার্কেটের সামনে ও ১৪ নং সেক্টরে বাড়ি করার অনুমতিপত্রও চাওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আছির উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, বিশেষ একটি গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি তিনি যে বাড়িটি করছেন সেটা তার বোনের। আর এ বাড়ি করার অর্থ এসেছে আশকোনায় থাকা একটি জমি বিক্রির মাধ্যমে। আর আশকোনার ওই জমিটি প্রায় ১৫ বছর পূর্বে কিনেছিলেন তিনি।

এর আগে, গত ৯ জুন বেবিচক চেয়ারম্যানকে পরিচালকসহ ১০ জনের নথি চেয়ে একটি চিঠি দেয় দুদক। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও ১২টি প্রকল্পে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়েছে কিনা এবং এর সঙ্গে বেবিচক ও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিমানবন্দরের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনালে বিনা টেন্ডারে ১৬ কোটি টাকার কাজ, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন, সাব স্টেশনে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ও প্যানেল বোর্ড স্থাপন, বোর্ডিং ব্রিজের স্পেয়ার পার্টস ক্রয়, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনের বিভিন্ন কাজ, চিলার প্লান্টের বিভিন্ন কাজ, মেইন পাওয়ার প্লান্টের কাজ, গার্ডেন লাইট স্থাপন, সৌর প্যানেল স্থাপন, চায়নার তৈরি ২০টি মাস্টলাইট ক্রয়, বিমানবন্দরে আন্ডার গ্রাউন্ড পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন, ফ্লোর মাউন্টের প্যানেল বোর্ড স্থাপন, ওয়াল মাউন্টের প্যানেল বোর্ড স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন অন্যতম।

এসব ঘটনায় বেবিচক থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি আছিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে রিপোর্ট প্রদান করলেও সে রিপোর্ট দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখেন পরিচালক (প্রশাসন) গৌতম কুমার ভট্টাচার্য। দুদকের চিঠিতে পরিচালক গৌতম কুমারেরও চাকরি সংক্রান্ত ব্যক্তি নথি, শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত যেসব স্টেশনে চাকরি করেছেন তার বিবরণ, পদোন্নতির কাগজ ও সম্পদ বিবরণীর দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

অপরদিকে সহকারী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ইএম বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প তৈরি ও এ খাতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। ২৭ বছর ধরে তিনি একই পোস্ট এবং একই জায়গায় কাজ করছেন। সম্প্রতি তাকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে সে আদেশ বাতিল করান। মুরাদ হোসেন এতটাই প্রভাবশালী, তিনি সিভিল এভিয়েশনের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও তোয়াক্কা করেন না। চাকরিকালীন তিনি নামে-বেনামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।

আরএম/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।