আলোচিত-সমালোচিত ডিএমপির ৩ পদক্ষেপ


প্রকাশিত: ০৩:০৯ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

২০১৪ সালে দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ৩টি সিদ্ধান্ত। এই তিন সিদ্ধান্ত হলো, এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠন, ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান এবং যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে বন্ধে অভিযান। ডিএমপি’র এই ৩ পদক্ষেপ যেমন আলোচিত হয়েছিল তেমনী সমালোচনাও কম হয়নি।

এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠন
ডিএমপি’র ২০১৪ সালের আলোচিত সিদ্ধান্তের প্রথম ছিল গুম খুন ও অপহরণ বন্ধে এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠন। ৩ মে থেকে এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড কাজ শুরু করে। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, রাজধানীতে অপহরনের ঘটনা না ঘটলেও সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অপহরণের ঘটনায় জনমনে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ঢাকায় যাতে অপহরণের ঘটনা না ঘটে বা অপহৃত ব্যক্তিকে যাতে দ্রুত উদ্ধার করা যায় সে জন্য এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের ৪০ জন সদস্য নিয়ে এই এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠন করা হয়। এ স্কোয়াডের প্রধান কাজ অপহরণ রোধে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা। এছাড়া অপহরণ মামলায় যেসব আসামি জামিনে বের হয়েছে বা হবে তাদের ওপরেও সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখার পাশাপাশি কেউ অপহৃত হলে তাকে উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

জনসাধারণের কাছ থেকে তথ্য পেতে এবং অপহরণ রোধে ডিএমপি চারটি মোবাইল ফোন নম্বর চালু করে। মনিরুল জানান, এই নম্বরগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। যে কেউ এসব নম্বরে অপহরণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য জানাতে পারবে। প্রয়োজনে তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রেখা হবে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াডের সদস্যরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

এব্যাপারে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সানোয়ার হোসেন জাগোনিউজকে বলেন, এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠনের পর থেকে সফলতার সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। অনেকে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও আতঙ্কে পরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা এসে অপহরণের অভিযোগ করতো। সেক্ষেত্রে যাচাইবাচাই করার পর সত্যতার ভিত্তিতে অভিযান চালানো হতো।

এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ২ শতাধিক অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে কয়েকটি বাদে সব অভিযোগের সমাধান করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। এন্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠনের পর রাজধানীতে কিডন্যাপ অনেকাংশে কমে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।



ফরমালিন
২০১৪ সালের দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার বিষয় ছিল খাদ্যে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টি। রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ফরমালিনযুক্ত আম ও লিচু। জনস্বার্থে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফরমালিন শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করে। ১১ জুন ডিএমপি মিডিয়া বিভাগ থেকে ক্ষুদে বার্তায় ‘ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথা জানায়। সেদিন দুপুর ১২টায় কমিশনার বেনজীর আহমেদ ফরমালিনযুক্ত ফলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সে লক্ষ্যে রাজধানীর আটটি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে শুরু হয় অভিযান। ফরমালিনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পেলে ঘটনাস্থলেই ধ্বংস অভিযান চালানো হয়।

ফরমালডিহাইড মিটার জেড থ্রিহান্ড্রেড নামে ফরমালিনের পরিমাণ নির্ধারণের যন্ত্র দিয়ে ডিএমপি প্রতিদিন হাজার হাজার টন ফল ধ্বংস করে। অভিযান শেষে ১৩ হাজার মন আম আর ৩৫ লাখ ফরমালিনযুক্ত লিচু ধ্বংসের তথ্য দেন ডিএমপি কমিশনার।

তবে বিপত্তি দেখা দেয় ডিএমপি’র ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র নিয়ে। ডিএমপির ‘ফরমালিন মাপার যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়েও। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট এবং বিসিএসআইআর-এর তথ্য উপাত্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রফতানিকারক ও আড়ৎদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বললেন, ‘ফরমালিন শনাক্তের সঠিক যন্ত্র ব্যবহার না করে বাতাসে ‘ফরমালডিহাইডের বাষ্প পরিমাপের যন্ত্র’ দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলমূলে প্রাকৃতিকভাবেই ফরমালিন থাকে।’ এই যন্ত্রের মাধ্যমে ফলমূলে যে ফরমালিন ধরা পড়ছে, ঠিক একই ফল বিসিএসআইআর, বুয়েট ও ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হলে এতে কোনো ফরমালিনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।

তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ জানান, “যারা এ অভিযানের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের মান নিয়েই প্রশ্ন আছে। অবশেষে গত ২১ জুলাই ফরমালিন মাপার যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুতের নির্দেশ দেয় আদালত। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রস্তুতের দায়ভার দেয়া হয় বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদকে (বিসিএসআইআর)। অবশেষে ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে বিসিএসআইআর।

প্রস্তুতকারক কোম্পানির ব্যবহারবিধি ও ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হলো, “এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর নামের এক কোম্পানির তৈরি করা ‘জেড থ্রিহান্ড্রেড’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড ভ্যাপর মিটার’ যন্ত্রটি পরিবেশ ও বাতাসে ফরমালডিহাইডের বাষ্প মাপার ‘সংবেদনশীল’ যন্ত্র। এর মাধ্যমে বাতাসে ফরমালডিহাইড গ্যাসের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে লেখা হল, “বাতাসের ফরমালডিহাইড মাপার বা বাষ্প পরিমাপের যন্ত্র দিয়ে দেশে ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সত্যি ভুল ‘অস্ত্র’ দিয়ে অভিযানে নেমেছিল ডিএমপি। কোটি মানুষের প্রশংসা-সাধুবাদ পেয়েও ফল ব্যবসায়ীদের হাজার কোটি টাকা লোকসানের দায় নিতে হয় ডিএমপিকে।



যত্রতত্র রাস্তাপারাপার রোথে অভিযান
২৫ নভেম্বর রাজধানীতে যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অবৈধ রাস্তা পারাপারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৫শে নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।

অভিযানে অর্থ জরিমানাসহ লিফলেট বিতরণ, সাইনবোর্ড লাগানো এবং প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে ডিএমপি। প্রচারণা স্বত্ত্বেওরাজধানীতে দেখা যায় সেই অবৈধ রাস্তাপারাপারের চিত্র।

ডিএমপির অভিযানে জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অভিযোগ করে পথচারিরা বলছেন, অভিযান নয় সবার আগে প্রয়োজন রাস্তাপারাপারে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

অভিযানে রাজধানীতে অবৈধ রাস্তাপারাপারের কারণে ৯ শ ৪০ জনের বিরুদ্ধে ১ লক্ষ ৭ হাজার ১শ ৯০ টাকা জরিমানা করে ডিএমপি।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক দক্ষিণের উপ-কমিশনার (ডিসি) খান মোহাম্মদ রেদওয়ান জানান, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এ অভিযান চালানো হয়। যারা নিয়ম না মেনে যত্রযত্র পারাপার হচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় ‍আনা হবে। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।