ভাঙতে হবে বিজিএমইএ ভবন


প্রকাশিত: ০৬:৫৭ এএম, ০২ জুন ২০১৬

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ১৮ তলা ভবন ভাঙা সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে ভেঙে ফেলতে হবে বিজিএমইএ ভবন।

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে এ আদেশ দেন। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমই ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন। তারপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ২০১৩ সালের ২৩ মে লিভ টু আপিল দায়ের করেন বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

রায়ে বলা হয়, ভবন ভাঙার সকল ব্যয় বিজিএমইএকেই বহন করতে হবে। এছাড়া এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। ওই ভবনের জায়গাসহ রাজধানীর কাওরান বাজারের বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে বলে আদালত রায়ে বলেন।

২০১০ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন হাতিরঝিলে স্থাপিত এই ভবন নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘নো প্ল্যান টু ডিমোলিশ আনঅথোরাইজড বিজিএমইএ বিল্ডিং সুন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তার পর দিন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ডিএইচএম মনির উদ্দিন প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের দৃষ্টিতে আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) ভবনটি ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ভবন ভাঙার রায় এল।

জলাধার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে রাজধানীর হাতিরঝিলে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনের নকশার অনুমোদন নেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা অক্ষত থেকে যায়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ রাজউক সেনা সদস্যদের সহায়তায় বিজিএমইএ ভবনের সামনের টিনশেড স্থাপনা ভেঙে দেয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অমলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর মালিকানাধীন এই জায়গা বিজিএমইএর নিজস্ব ভবন করার জন্য বিক্রি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০০০ সালে জলাধার সংরক্ষণ আইন হলেও তা লঙ্ঘন করে নির্মিত হতে থাকে এ ভবন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে চার দলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমই ভবন ভাঙার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় রায় স্থগিত করে দেন।
 
আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিজিএমইএর পক্ষে ব্যারিস্টার রফিকুল হক ও অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহুববে আলম। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।
 
আদালত বলছেন, হাতিরঝিলের লেককে কেন্দ্র করে সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই ভবনের কারণে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটি একটি বিষফোঁড়া। আদালত এও বলেছেন, সরকারি একটি সংস্থার জমি আরেকটি সংস্থা কীভাবে বিজিএমইকে বরাদ্দ দেয়? জলাধার আইন অনুযায়ীও লেক দখল করে ভবন গড়ে তোলা অবৈধ।


এফএইচ/এনএফ/এবিএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।