ঈদের ছুটি: সর্বোচ্চ সতর্কতায় ঘটেনি বড় অপরাধ

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই দেশজুড়ে একের পর এক ঘটেছে ছোট-বড় অপরাধের একাধিক ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি আর অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে এসব।
এরই মধ্যে ভারতের কলকাতায় একটি ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের সদস্যরা পবিত্র ঈদুল ফিতরে ছুটি ঘিরে নাশকতা পরিকল্পনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশ। এই ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সক্ষমতা ও সতর্কতায় ঘটেনি বড় অপরাধ। ছোট-ছোট বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্যে কেটেছে নগরসীর ঈদের ছুটি
সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে রাজধানীজুড়ে নাশকতার আশঙ্কা করছিল নগরবাসী। নানান আলোচনার মধ্যেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ বলছে, এবারের ঈদে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রণে ছিল ছুটির দিনের অপরাধ।
এদিকে ঈদের আগে থেকে ছুটি ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, কলকাতায় কারা আছে? কলকাতায় আছে ক্রিমিনাল। ক্রিমিনালরা তো সব সময় এ জিনিস চিন্তা করবে। ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।
একই সঙ্গে, নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঈদের ছুটিতে যাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।
এরই মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখেছি বিভিন্ন অপরাধে যাদের নাম এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠিন ছিল। যারা এসব অপরাধে জড়িত ছিল তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া যেসব অপরাধ আগে থেকেই ছিল, যেমন: কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান আগেও ছিল, এখনো আছে। আমরা বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছি এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ বিদেশি অস্ত্র ও এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করেছি- তালেবুর রহমান
আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, আমরা সব সময় সতর্ক আছি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ না, নিষিদ্ধঘোষিত যেসব দল আছে সেসব দল যাতে কোনো রকম কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যপারে আমরা সদা সতর্ক।
তিনি বলেছিলেন, ঈদের জামাতে এবং নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৫ হাজার পোশাকধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া এটিইউ, সিটিটিসি, ডিবি- সবার সমন্বয়ে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে।
গত ৩১ মার্চ দেশে পালিত হয় ঈদুল ফিতর। এ উৎসবকে ঘিরে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ে দেশ। এই ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সক্ষমতা ও সতর্কতায় ঘটেনি বড় অপরাধ। ছোট-ছোট বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্যে কেটেছে নগরসীর ঈদের ছুটি।
ঈদের ছুটি চলাকালীন মিরপুরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার যুবকের মৃত্যু হয়। মোহাম্মদপুরে এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন ফুডপান্ডার ডেলিভারি কর্মী। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সেন্টমার্টিন সি ভিউ ট্রাভেল এজেন্সির সুপারভাইজার ইমন। পল্লবীতে ৬১ চোরাই ল্যাপটপসহ গ্রেফতার করা হয় ২ জনকে। দারুস সালাম ও মুগদা এলাকায় দুই কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বনশ্রীতে নারী সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা ঘটে। মতিঝিলে বাসের ধাক্কায় নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী। ডেমরায় নারীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনা ও ধলেশ্বরী নদীতে নৌকায় উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
এসব ঘটনার সবগুলোতেই আইনগত ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
৩ এপ্রিল ধলেশ্বরী নদীতে নৌকার ওপর উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে নাচানাচি করছিল কিশোর গ্যাং 'ডেঞ্জার গ্যাং'-এর সদস্যরা। এসময় সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম অভিযান পরিচালনা করে গ্যাংয়ের ১৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এরই মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখেছি বিভিন্ন অপরাধে যাদের নাম এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠিন ছিল। যারা এসব অপরাধে জড়িত ছিল তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া যেসব অপরাধ আগে থেকেই ছিল, যেমন: কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান আগেও ছিল, এখনো আছে। আমরা বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছি এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ বিদেশি অস্ত্র ও এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করেছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।
ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে ঘটা অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম। সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করেই আমরা নগরবাসীর সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি যাতে কোনো ধরনের অপরাধ না ঘটে এবং নগরবাসী যাতে ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে ঈদের জামাতে অংশ নেওয়াসহ ছুটি উপভোগ করতে পারে। সেজন্য আমাদের দিক থেকে কোনো কমতি ছিল না। দু-একটা ছোট, বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে আশঙ্কাজনক অপরাধ বা দুর্ঘটনা ঘটেনি।
কেআর/এমএইচআর/জিকেএস