চীন-বাংলাদেশ যৌথ বিবৃতিতে যা আছে

চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করবে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করবে। এছাড়া দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান বজায় রাখার নীতিতে অটল থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আজ ২৮ মার্চ (শুক্রবার) প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
যৌথ বিবৃতির বরাত দিয়ে তিনি জানান, এশিয়ার বোয়াও ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২৬ ও ২৭ মার্চ হাইনান, চীনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এ যোগ দেন। এরপর চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ২৭ থেকে ২৯ মার্চ বেইজিং সফর করেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেইজিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। চীনের উপরাষ্ট্রপতি হান ঝেং বেইজিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভীর আলোচনা হয় এবং বিস্তৃত ঐকমত্য অর্জিত হয়।
চীনা পক্ষ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানায় এবং আগস্ট ২০২৪ থেকে সরকারের নেওয়া সংস্কার ও অগ্রগতির প্রশংসা করে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সরকারকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। উভয় পক্ষ সমগ্র কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
আরও পড়ুন
- চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
- টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিষয়ক আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের ব্যবসায়ী নেতাদের বিনিয়োগ সংলাপ
এছাড়া গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক সব সময়ই স্থিতিশীল ও ইতিবাচক ছিল বলে দুই দেশ সম্মত হয়। তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি মেনে চলা, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করা এবং দুই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশ ‘এক চীন নীতি’ সমর্থন করে এবং তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।
দুই পক্ষ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ চীনের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রশংসা করেছে এবং চীনের অর্থায়নে নির্মিত সেতু, রাস্তা, রেললাইন, বিদ্যুৎ গ্রিড ও জল নিষ্কাশন প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাবের প্রশংসা করেছে।
চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। চীনা কোম্পানিগুলোকে মংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চলে (সিইআইজেড) বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।
দুই পক্ষ চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা দ্রুত শুরু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানিসহ কৃষিপণ্য রপ্তানি দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য আরও অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
দুই পক্ষ বন্যা পূর্বাভাস, নদী খনন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনে সম্মত হয়েছে। সংস্কৃতি, পর্যটন, গণমাধ্যম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও যুব বিনিময় জোরদার করা হবে।
বাংলাদেশ চীনের ইউনান প্রদেশে চিকিৎসা সেবার সুবিধার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ 'সমান ভবিষ্যতের জন্য যৌথ সম্প্রদায় গঠনের' ধারণার প্রশংসা করেছে এবং চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (জিডিআই) গুরুত্ব স্বীকার করেছে।
গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) ও গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই)-এর গুরুত্বও স্বীকার করেছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে, ২০২৫ সালে উভয় পক্ষ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও বহুপাক্ষিকতার নীতিগুলোকে সমর্থন করবে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেছে। চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে এবং পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সফরকালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্যসেবা এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থ অনুবাদ ও প্রকাশনা সংক্রান্ত চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও চীনের জনগণকে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি চীনা নেতৃত্বকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এমইউ/এমএইচআর/এমএস