হামীম গ্রুপের জিএমকে হত্যা

অপহরণের পর ছিনিয়ে নেওয়া টাকায় ইফতার কেনেন অপহরণকারীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৫ এএম, ২৮ মার্চ ২০২৫
জিএম মো. আহসান উল্লাহ

সাইফুল ইসলাম (৩৯) নামের একজনকে আট মাস আগে ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ দেন হামীম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মো. আহসান উল্লাহ (৪৮)। চালককে বিশ্বাস করে অনেক কিছুই শেয়ার করতেন তিনি। গাড়িচালক সাইফুলের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে।

গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম ছিলেন একটি অপহরণকারী চক্রের সদস্য। সাইফুল সার্বক্ষণিক নজর রাখতেন হামীম গ্রুপের জিএম আহসান উল্লাহর ওপর। পূর্ব পরিকল্পনা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লোভে আহসান উল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে চক্রটি।

বিজ্ঞাপন

অপহরণের পর আহসান উল্লাহর কাছে থাকা ৫৮ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয় অপহরণকারীরা। কিন্তু অপহরণকারীরা পরিচিত হওয়ায় আহসান উল্লাহকে নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। দুদিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২৫ মার্চ দুপুরে রাজধানীর তুরাগের দিয়াবাড়ির ১৬ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর প্লট থেকে হামীম গ্রুপের জিএম মো. আহসান উল্লাহর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মরদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১)।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, আহসান উল্লাহকে হত্যার আগে ছিনিয়ে নেওয়া ৫৮ হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে ইফতার কিনে খুনিরা ইফতার করে। অপহরণকারীরা পরিচিত হওয়ায় আহসান উল্লাহকে হত্যা করে তুরাগে ফেলে দেয়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার দুজন হলেন- গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম (৩৯) ও নূর নবী মিয়া (১৯)। দুজনকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, আহসান উল্লাহকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে মঙ্গল ও বুধবার র‌্যাব ১ ও ১৩ এর যৌথ অভিযানে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিফ বিন হালিম জানান, ঈদ উপলক্ষে অতি লোভে একটি চক্র জিএম আহসান উল্লাহর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ মার্চ বিকেল ৩টার পর আহসান উল্লাহ অফিস থেকে বের হলে অপহরণ করে চক্রটি। আশুলিয়া এলাকা থেকে চারজন তাকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে।

খুনিরা গত সাত মাস ধরে আহসান উল্লাহর সব খোঁজ খবর রাখতেন উল্লেখ করে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম আহসান উল্লাহর লাইফস্টাইল থেকে শুরু করে সব কিছুই জানত। ঈদের জন্য কিছু টাকা উসুল করতে চেয়েছিল অপহরণকারী চক্রটি। টাকা নেওয়ার পর তারা ভাবেন, আহসান উল্লাহকে ছেড়ে দিলে তাদের পরিচয় বলে দেবে। এরপর তাকে নির্যাতনের পর মেরে তুরাগে নিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় আরও দুইজন আসামি পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাহাত খান জানান, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আরও কয়েকজন নজরদারিতে আছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, আহসান উল্লাহ হামীম গ্রুপের আশুলিয়ার দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেডের জিএম হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাসা তুরাগ থানাধীন চন্ডালভোগ এলাকায়। বাসা থেকে নিজস্ব প্রাইভেটকারে অফিসে যাতায়াত করতেন।

প্রতিদিনের মত গত রোববার সকালেও অফিসের কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হন আহসান উল্লাহ। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার ব্যক্তিগত চালক গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম। এরপর থেকে আহসান উল্লাহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের দুদিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

টিটি/জেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।