সহযোগীদের ওপরে তোলা হয়েছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিচে পড়ে গেছেন

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৫

বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান খান। ১৯৭১ সালে কলেজে পড়ার সময় জীবনের পরোয়া না করে বন্দুক হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান। প্রতিরোধযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন।

১৯৭১ সালের জুন মাসে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন মিজানুর রহমান খান। প্রশিক্ষণের পর তাকে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জে পাঠানো হয়। ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক আবু তাহের (বীর উত্তম) তাকেসহ ৪৮ জনকে নিয়ে একটি দল গঠন করে আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন। তিনি তাদের সম্মুখযুদ্ধের জন্য রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থানে তারা সম্মুখযুদ্ধ করেন।

বিজ্ঞাপন

সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় শত্রু বেষ্টনী থেকে উদ্ধার করে দুর্ধর্ষ কামালপুরের যুদ্ধে পাকিস্তানি আর্মির আত্মসমর্পণে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মিজানুর রহমান খান। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা নিয়ে লিখেছেন ‘একাত্তরে এক বিন্দু শিশির’।

মিজানুর রহমান খানের (বীর প্রতীক) সঙ্গে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের সংশোধন উদ্যোগ, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, তালিকার বাইরে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুদ রানা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকার সশস্ত্র যোদ্ধা ছাড়া বাকিদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে অনেকেই অনেকভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এটাকে মিস ইন্টারপ্রেট (ভুল ব্যাখ্যা) করে তাদের (সহযোগী) অনেক ওপরে তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনেক নিচে পড়ে গেছেন। আমি একজন সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমি মাঠে যুদ্ধ করেছি। যারা কলকাতায় বসে থেকে নিউজ করেছেন, নাটক করেছেন, ফুটবল খেলেছেন, তাদের জীবনের যে ঝুঁকি আর যারা সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন তাদের জীবনের ঝুঁকি তো একরকম নয়। দুটির মধ্যে তো অনেক পার্থক্য আছে। সরকার আইন পরিবর্তন করে যে সংশোধন আনতে চাইছে আমি এর সঙ্গে একমত। তবে যদি কিছু লোককে বাদ দেওয়ার জন্য সরকার এটা করে তবে আমি একমত নই।’

মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘অনেক প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যারা এখনো তালিকাভুক্ত হননি। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বহুবার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। ঢাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো। কিন্তু দেখা গেলো আমি এখন যে চাকরি করি সেখানে আমার পোস্টিং চট্টগ্রাম, খুলনা বা নোয়াখালী। তাই আমি হয়তো সময়মতো আবেদন দাখিল করতে পারিনি। যারা আবেদন করেছেন তাদের যাচাই-বাছাই করে তালিকায় নাম এসেছে। আমি তো বাদ থেকে গেলাম। এদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সহযোগীদের ওপরে তোলা হয়েছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিচে পড়ে গেছেন

‘আমি ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। আমি থাকতাম ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্পে। আমার ৫-৬টি তাঁবুর পর থাকতেন আমার মামা। উনি ছিলেন পুলিশ সদস্য। তিনি একেবারে নিরীহ লোক। আমি দেখলাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম নেই। কখন কোথায় ফরম পূরণ করতে হবে উনি খেয়াল করেননি। এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আমি অনেকের কথা জানি।’

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

মুক্তিবার্তায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ঢুকেছেন জানিয়ে মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করার সঙ্গে সঙ্গে দুষ্কৃতকারীরা অস্ত্র লুটপাট করে তারা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেলেন। ওটাকে আমরা নাম দিয়েছিলাম ‘সিস্টেম ডিভিশন’। বলতাম তারা ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। তবে এখন তাদের চিহ্নিত করে আলাদা করার সুযোগ নেই।’

স্বাধীনতার পর একটা গোষ্ঠী শুধু লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত ছিল মন্তব্য করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘তারা স্বাধীনতা ভুলে গিয়েছিল। এত মানুষের ত্যাগ তারা ভুলে গিয়েছিল।’

বীর প্রতীক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এমন প্রভাবশালী লোক হয়ে গেছেন যে, আসল মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তারাই বেশি শক্তিশালী। তাদের দল ভারী। এসব বন্ধে শক্ত আইন করে যেতে হবে যেন কেউ এসে আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাতে না পারে।’

বিজ্ঞাপন

‘তবে মুক্তিবার্তার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা উচিত। এখনো এটা সম্ভব। এখনো অনেক মুরুব্বি, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা বেঁচে আছেন। কোনো এলাকায় যদি স্বচ্ছভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়, তবে এটা সম্ভব। তবে ডিসি ও ইউএনওদের দিয়ে করলে হবে না।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘১০-১২টি প্রশ্ন করলে তিনি এখন মুক্তিযোদ্ধা বা সশস্ত্র যোদ্ধা কি না তা বের হয়ে আসে। কিন্তু তালিকা করার জন্য সরকারের আন্তরিকতা দরকার। আমরা চাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা বাদ পড়েছেন তাদের যুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা যেন এ সরকার করে যায়।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তরের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কোনো সরকার হয়নি। সরকার হয়েছে রাজনৈতিক সরকার। এখন সেই সুযোগ এসেছে।’

বিজ্ঞাপন

আরএমএম/ইএ/এমএমএআর/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।