ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া ‘ডিজিটাল প্রতারণা’

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৫

ঈদ কিংবা কোনো বড় উৎসব ঘিরে বেশি সক্রিয় হয় অপরাধী চক্র। এসময় জাল নোট ছড়ানো, ছিনতাই, চুরির পাশাপাশি গত কয়েক বছরে যোগ হয়েছে ডিজিটাল প্রতারণা। এই ডিজিটাল প্রতারণাও আবার বদলাচ্ছে ধরন। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রতারণা নতুন নয়। সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ইমেইল ব্যবহার ও হ্যাক করে প্রতারণা। ঈদ সামনে রেখে আরও বেপরোয়া এই চক্র।

রমজান মাস ও ধর্মীয় দুর্বলতা ব্যবহার করে প্রতারণায় জড়াতেও পিছপা হচ্ছেন না অপরাধীরা। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীদের কাছে ওটিপি চাওয়া, ভুলে টাকা চলে যাওয়া, পুরস্কার জিতেছেন- প্রভৃতি বলে প্রতারণা নতুন নয়। এখন হোয়াসঅ্যাপ, ইমোও হ্যাক হচ্ছে। আবার ব্যবহারকারীর হোয়াটসঅ্যাপে পরিচিত কারও নম্বর-নাম ব্যবহার করে অর্থ সহায়তা চেয়েও প্রতারণা করছেন প্রতারকরা।

বিজ্ঞাপন

যেভাবে হচ্ছে প্রতারণা

কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আমিনুর রহমান আরমান নামে একজনের স্ত্রীর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। মেসেজটি পড়ে তিনি খুব আবেগাপ্লুত হন। তখনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে উদ্যত হন। তবে আরমান সেই মুহূর্তে বাসায় ছিলেন। ঘটনাটি তার স্ত্রীর কাছে শোনেন এবং মেসেজটি পড়েন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুর রহমান আরমান বলেন, আমার স্ত্রীর মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। লেখা তার খুব কাছের আত্মীয়। তারা নাকি বাজার করতে পারছে না এই রমজানে। অনেক আর্থিক অনটনে আছেন। ফিতরা বা জাকাত কিছু দিতে পারলে ভালো হয়। বাকি কয়েকটা রোজাও রাখতে পারবে তাহলে। সেই আত্মীয় আবার খুব সুন্দর করে নিজের বিকাশ ও নগদ নম্বরও দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া ‘ডিজিটাল প্রতারণা’

আমার স্ত্রী একটু নরম মনের মানুষ। আর রোজার মাসে সাহায্য করতে বলা হয়েছে ধর্মে। বেচারিও ভাবলো সাহায্য করা যায়। কিন্তু আমাকে জানালে নম্বরটি ট্রু কলারে সার্চ দিলে নাম আসে ‘Cutee Frnz’ এবং ট্রু কলারে অনেকে নম্বরটি স্প্যাম ও ফ্রড হিসেবে রেড মার্ক করে রেখেছেন। ট্রু কলারে অনেকে কমেন্টও করেছেন যে নম্বরটা থেকে প্রতারণা করা হচ্ছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যতগুলা মানুষ নম্বরটি রিপোর্ট করছেন সবাই বলেছেন এই নম্বর থেকে তাদের আসল নাম নিয়েই নাকি মেসেজ পাঠানো হয়েছে।

প্রতারক চক্র কৌশলে কথার ফাঁদে ফেলে কিছু সংখ্যক গ্রাহককে বোকা বানিয়ে কিংবা ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করার প্রচেষ্টা চালায়। আমরা এ বিষয়ে গ্রাহকদের সব সময় সচেতন থাকতে বলি। কোনো অবস্থায়ই গ্রাহক যাতে পিন, ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার না করেন সে পরামর্শ দেই।- বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম

মাসুদ কামাল নামে একজনের মোবাইলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ‘ক্যাশ ইনের’ মেসেজ আসে। সেখানে লেখা- ‘…. Cash In Received TK 8200.00 from 01703515700 successful. Fee TK 8200 Balance….’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পরে মাসুদ কামালকে আরেকটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, ভুলে তার অ্যাকাউন্টে ৮২০০ টাকা চলে গেছে। এই টাকাটি তার মায়ের অপারেশনের জন্য। অনুগ্রহ করে টাকাটি এই নম্বরে সেন্ড মানি করুন। এরপর মাসুদ কামাল সত্য ভেবে তিনি অ্যাপসে ঢুকে অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন কোনো টাকা আসেনি। এরপর তিনি বুঝতে পারেন এটি তার সঙ্গে প্রতারণা।

ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া ‘ডিজিটাল প্রতারণা’

প্রতারক চক্র বছরজুড়েই এমন প্রতারণা চালায়। তবে ঈদ সামনে রেখে তা আরও বেড়েছে। চলমান রমজান, রোগী হাসপাতালে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করে ও আর্থিক সংকটে খেতে না পারাসহ এমন নানাবিধ সমস্যার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একাধিক প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা করলেও এবার ঈদ সামনে রেখে নতুন নতুন সব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে তারা। ইসলাম ধর্মমতে, রমজান মাসে এক টাকা দান করলে ৭০ টাকা দানের সওয়াব পাওয়া যায়- ধর্মকে পুঁজি করে এমন কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ বলেছে, এক সময় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওটিপি নম্বর নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো প্রতারকরা। সম্প্রতি অধিকাংশ গ্রাহক ওটিপির বিষয়ে অধিক সচেতন হওয়ায় বর্তমানে ওটিপি দিয়ে প্রতারণা অনেকাংশে কম। ফাঁদে ফেলে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রতারণা চলছে বেশি।

১২ হাজার টাকা বোনাস ‘ফাঁদ’

‘অভিনন্দন প্রিয় বিকাশ গ্রাহক! আপনি দীর্ঘদিন বিকাশের সঙ্গে থাকার জন্য ১২ হাজার টাকা বোনাস পেয়েছেন।’ এমন বার্তা নিয়ে একটি লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে যা বলছে ফ্যাক্টচেকিং

পরে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারে অনুসন্ধানী টিম জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ ব্যবহারকারীদের ১২ হাজার টাকা দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। বরং, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে এই প্রলোভন দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত পোস্টগুলোতে থাকা ওয়েবসাইট লিংকে প্রবেশ করলে ওপরে বিকাশের লোগো এবং ‘অভিনন্দন প্রিয় বিকাশ গ্রাহক! আপনি দীর্ঘদিন বিকাশের সাথে থাকার জন্য ১২ হাজার টাকা বোনাস পেয়েছেন।’ শীর্ষক একটি লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

নিজের কাছে থাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো তথ্য কিংবা ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। এছাড়া লাভের আশায় কোনো জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট করা উচিত নয়। কারণ এগুলো সবই স্ক্যাম।- সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহিদুল ইসলাম

এর নিচে ‘উত্তোলন (Withdraw)’ এবং ‘সেন্ড মানি (Send Money)’ নামে দুটি অপশন দেখা যায়। এছাড়া এর নিচে রিচার্জ, পেমেন্ট, ক্যাশ আউট, হিস্টোরি ও সেটিংস অপশন দেখা যায়। তবে এগুলোতে কোনো অ্যাকটিভ লিংক না থাকায় এগুলোতে ক্লিক করলেও কোথাও রিডিরেক্ট করে না। তবে প্রথম দুটি অপশন তথা ‘উত্তোলন (Withdraw)’ এবং ‘সেন্ড মানি (Send Money)’তে ক্লিক করলে এগুলো আরেকটি লিংকে নিয়ে যায়।

এ পর্যায়ে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী বিকাশহীন একটি ফোন নম্বর দিলে ‘The input wallet is not eligible’ লেখাটি প্রদর্শন করে, যা প্রমাণ করে এটি বিকাশের আসল পেমেন্ট পেজেই নিয়ে এসেছে। তাছাড়া এ বিষয়ে বিকাশের ডোমেইন নাম দেখেও নিশ্চিত হওয়া যায়।

ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া ‘ডিজিটাল প্রতারণা’

বিজ্ঞাপন

বারবার সতর্ক করছে বিকাশ
কী কী উপায়ে প্রতারক চক্র আপনাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারে এবং প্রতারিত হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে বিকাশ।
>> কখনোই বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন/ভেরিফিকেশন কোড কাউকে বলবেন না বা ফোনকলে থাকা অবস্থায় টাইপ করবেন না।
>>এজেন্ট সেজে ভুলে টাকা এসেছে বা ভুল অভিযোগে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে বললে কল কেটে দেবেন।
>>বিকাশ কর্মকর্তা সেজে ভয়/লোভ দেখালে কল কেটে দেবেন।
>>অনুদান বা ভাতার কথা বলে কল বা মেসেজ দিলে তা এড়িয়ে যাবেন।
>>অনলাইনে যত্রতত্র উপহার বা অফারের লিংকে যেতে বললে যাবেন না।
>>ইমো, মেসেঞ্জার, হোয়াটসআ্যপে পরিচিত কেউ হঠাৎ টাকা চাইলে আগে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে নেবেন।

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতারক চক্র কৌশলে কথার ফাঁদে ফেলে কিছু সংখ্যক গ্রাহককে বোকা বানিয়ে কিংবা ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করার প্রচেষ্টা চালায়। আমরা এ বিষয়ে গ্রাহকদের সব সময় সচেতন থাকতে বলি। কোনো অবস্থায়ই গ্রাহক যাতে পিন, ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার না করেন সে পরামর্শ দেই। এছাড়া, বিকাশ গ্রাহকদের প্রতারণা এড়াতে সারাবছরই সব মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।’

এমপিওভুক্তির নামে প্রতারণা ফাঁদ, সতর্ক করলো মাদরাসা অধিদপ্তর

একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তীকরণ, এমপিওভুক্ত মাদরাসায় বিশেষ বরাদ্দ, উচ্চতর স্কেল, পদোন্নতির নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে। এসব প্রতারণা থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।

বিজ্ঞাপন

অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেউ কোনো ধরনের সুবিধা বা অর্থ দাবি করলেই বুঝতে হবে এটা প্রতারক চক্রের কাজ। এক্ষেত্রে দ্রুত পুলিশকে জানানোর অনুরোধ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডিজি প্রতিনিধি মনোনয়নে সহযোগিতা, এমপিও শিটে নাম, পদবি, জন্ম-তারিখ সংশোধন, বকেয়া প্রদান, প্রশিক্ষণে শিক্ষক-কর্মকর্তা মনোনয়ন, ইনডেক্স প্রদান, ইনডেক্স কর্তনসহ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কাজ করিয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস-প্রলোভন দেখিয়ে মাদরাসায় ফোন, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এসএমএস, বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা দাবি করছে। ইতোমধ্যে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে একাধিক প্রতারক চক্র বিভিন্ন মাধ্যমে (হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কর্মকর্তার ছবি ব্যবহার করে) টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে কোনো কাজে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অর্থের বিনিময়ে বা উপহারের বিনিময়ে কোনো কিছুই হওয়ার সুযোগ নেই। এমন কিছু থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির নামে প্রতারণা

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল নামে একজন ভুক্তভোগীর মোবাইলে তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের নাম, স্কুল এবং রোল নম্বর দিয়ে মেসেজ দেওয়া হয়। মেসেজে বলা হয়, তার মেয়ে উপবৃত্তি পেয়েছে। একটি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তখন মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল ওই নম্বরে কল দিলে তারা দাবি করেন- উপবৃত্তি দেওয়া হবে তবে আনুষঙ্গিক খরচসহ ১৫শ টাকা বিকাশ করতে হবে। এই কথা শোনার পর উজ্জ্বল বুঝতে পারেন এটি প্রতারক চক্রের কাজ।

সাবেরা বানু নামে একজন ভুক্তভোগীর মোবাইলে ফোন দিয়ে বয়স্ক ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতারক চক্র সাবেরা বানুকে বলে, তিনি সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন। এই ভাতা নিতে হলে খরচসহ ১২শ টাকা একটি নম্বরে বিকাশ করতে হবে। পরে সাবেরা বানু তার প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন বিষয়টি ভুয়া।

ফেসবুক আইডি-হোয়াটসঅ্যাপ-ইমো হ্যাক করে প্রতারণা
নাফিসা আনজুমের (ছদ্মনাম) মোবাইলটি ঢাকার গণপরিবহন থেকে ছিনতাই হয়ে যায়। এরপর ছিনতাইকারী দামি মোবাইলটি বিক্রি করে এক দোকানে। মোবাইলটি যিনি কিনেছিলেন তিনি নাফিসা আনজুমের মোবাইলে থাকা ছবি ও ভিডিও নিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। হুমকি দিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে বিষয়টি সাইবার পুলিশকে জানিয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এরপর তার হারানো মোবাইলসহ গ্রেফতার করা হয় হুমকি দেওয়া ব্যক্তিকে।

জাকির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তার পরিচিত অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ঋণ চাওয়া হয়। হ্যাকার মুহূর্তেই অর্ধলাখ টাকা কয়েকজনের কাছ থেকে জাকিরের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর জাকির যখন বুঝতে পারেন তখন অবশ্য করার কিছুই ছিল না।

কল মার্জিং প্রতারণা থেকে সাবধান
কল মার্জিং প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওটিপি সংগ্রহ করে প্রতারকরা। এরপর সেই ওটিপি কাজে লাগিয়ে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অর্থ ও তথ্য চুরি করে তারা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বোকা বানাতে প্রথমে পরিচিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহারে ফোনকল করে প্রতারক। এসব ফোনকলে সাধারণত বিশেষ অফারসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করা হয়।

এরপর ফোনকলটিতে গুরুত্বপূর্ণ বা পরিচিত কোনো ব্যক্তিকে যুক্ত করার জন্য কল মার্জ করতে বলা হয়। কল মার্জ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওটিপি নম্বর শোনা যায়। প্রতারকরা ফোনকলে যুক্ত থাকায় ওটিপি নম্বরটি তারাও শুনতে পান। ফলে ওটিপি নম্বরটি কাজে লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ ও তথ্য চুরি করে প্রতারকরা।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসক, উচ্চপদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারাই মূলত এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কারণ, তাদের পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে প্রতারকেরা আরও বেশি মানুষকে ফাঁদে ফেলতে পারে।

কল মার্জিং প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকতে অপরিচিত নম্বর থেকে কোনো ব্যক্তি কল মার্জ করার অনুরোধ করলে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে আলাদাভাবে দুই ব্যক্তিকে ফোন করা যেতে পারে। এছাড়া অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোনকল এড়িয়ে চলার পাশাপাশি সন্দেহজনক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ফোন নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো ওটিপি কিংবা কোনো কোড কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। তাহলে কেউ টাকা খোয়াবেন না। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

৯৯৯ থেকে কল এলেও সাবধান!
সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে বিকাশ বা অন্য মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর জানতে চাওয়া হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর শেয়ার না করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

যা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ৯৯৯ থেকে কখনোই কোনো ব্যক্তির মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) পিন নম্বর অথবা ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর জানতে চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ৯৯৯ নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি মুহূর্তে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়।

মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকা ও তাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানা বা ৯৯৯ নম্বরে জানাতে জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

ডিএমপি ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার (ডিসি) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই বিকাশসহ অন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের অভিযোগ পাচ্ছি। এসব অ্যাকাউন্ট যে হ্যাক হয়েছে শুধু তা নয়, সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তেই এমন প্রতারণা হচ্ছে। তবে অভিযোগের শতকরা প্রায় ৯৯ শতাংশ আমরা ডিটেক্ট করতে পারি।’

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইদানীং মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা বেড়েছে। তবে এসব প্রতারণার আগের একটি ধাপ হলো ‘ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপস’। এই পদ্ধতিতে স্ক্যাম করছে প্রতারক চক্র। বিদেশ থেকে বাংলাদেশের সিম দিয়ে টেলিগ্রাম কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে এই স্ক্যাম করা হচ্ছে। এই অ্যাপসে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে কিছু ইনভেস্টমেন্ট করতে হয়, এর কিছুদিন পর লভ্যাংশ জমা হতে থাকে। গ্রাহক তখন বিকাশ বা অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা তুলতে পারে। এরপর বেশি লাভের আশায় বেশি ইনভেস্টের পর লাখ টাকা বা এর বেশি জমা হলেই প্রতারক চক্র ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টটি তখন ব্লক করে দেয়।’

মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিজের কাছে থাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো তথ্য কিংবা ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। এছাড়া লাভের আশায় কোনো জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট করা উচিত নয়। কারণ এগুলো সবই স্ক্যাম।’

টিটি/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।