ইচ্ছামতো দামে খেজুর বিক্রি, ক্ষুব্ধ ক্রেতা

ছোট্ট দোকান। সামনে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে খেজুর। মূল্যতালিকা ওপরে টানিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সেটি পুরোনো তালিকা। ওই তালিকা ধরেই বিক্রি করা হচ্ছে। দামাদামি করলে এক টাকাও কম রাখা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রেতারা কিনলেও অনেকে না কিনেই চলে যাচ্ছেন।
বুধবার (১৯ মার্চ) সকালে সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজারের যাদব লাহেড়ী লেনে খেজুর বিক্রির এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এই বাজারে মেসার্স রেজাউল স্টোর নামের একটি খেজুরের দোকানে মেকজুএল এক নম্বর ১ হাজার ৬০০ টাকা, মিকজেল ভিআইপি ১ হাজার ৩৫০, মরিয়ম ভিআইপি ১ হাজার ২৫০, আজুয়া ভিআইপি ১ হাজার ১০০, সুক্কারি ভিআইপি ৯০০, মাবরুম মরিয়ম ৮৫০, মাসরুক ৬৫০, ব্লাক মরিয়ম ১ হাজার , ডাবাস ১ নম্বর ৫২০, লুলু ৫০০, জাবিল (ছড়া) ৬৫০, কালমী ৬২০, আমরার ভিআইপি ৭২০, জাবরি ৪৮০, ডাবাস ৪৪০, হাগাল ৫২০, বিজারারি ৬২০, বিজা ১৮০ ও জিহাদি ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বাজারজুড়ে গড়ে ওঠা অন্য দোকানগুলোতে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। একই ধরনের খেজুরের প্রতি কেজি দামে পার্থক্য রয়েছে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
আমরা বিভিন্ন বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। ক্রেতাদের ঠকানোর প্রমাণ মিললে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। খেজুরের দোকানগুলোতেও অভিযোগ চালানো হবে। পাইকারিভাবে কিনে আনার ভাউচার চেক করা হবে। বেশি লাভ করে বিক্রি করাসহ যথাযথ মূল্যতালিকা না টানালে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, সারাবছর এই বাজারে খেজুর বিক্রি হয়। তবে রমজান মাস শুরুর পর থেকেই এই বাজারে প্রতিদিন অগণিত খেজুর বিক্রি হয়। অনেক বিক্রেতা হাঁকডাকে দোকান মাতিয়ে রাখেন। এই রমজান শুরুর আগের দিন থেকে বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করছেন। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে টানাচ্ছেন না মূল্যতালিকা। যারা টানাচ্ছেন তারা নিয়মিত পরিবর্তন করছেন না মূল্যতালিকা। এসব নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা মাঝেমধ্যেই জড়াচ্ছেন বাগবিতণ্ডায়।
খেজুর কিনতে এসে দামাদামি করছিলেন হনুফা খাতুন। দামাদামি চলবে না বিক্রেতা জানালে ৮৫০ টাকা দিয়ে এক কেজি খেজুর কেনেন।
ক্ষুব্ধ হয়েও লাভ নেই ক্রেতার-ছবি জাগো নিউজ
এই ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, দোকানের সামনে পুরোনো মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখা হয়েছে। ওই মূল্যতালিকা অনুযায়ী বিক্রি করা হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বললে উল্টো সাতপাঁচ বুঝিয়ে দেয় বিক্রেতা। বিক্রেতার নির্ধারিত দামের চেয়ে এক টাকাও কম রাখা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে।
দোকানের সামনে পুরোনো মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখা হয়েছে। ওই মূল্যতালিকা অনুযায়ী বিক্রি করা হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বললে উল্টো সাতপাঁচ বুঝিয়ে দেয় বিক্রেতা। বিক্রেতার নির্ধারিত দামের চেয়ে এক টাকাও কম রাখা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে।
আব্দুল হাফিজ নামের আরেকজন বলেন, মূল্যতালিকা ওপরে টানিয়ে বিভিন্ন খেজুরের নাম লিখে রেখেছেন গুটিকয়েক বিক্রেতা। অনেকে তালিকা না টানিয়েই বিক্রি করছেন। আলাদা করে সাজিয়ে রাখা খেজুরের সঙ্গে দাম লিখে রাখা হয় না। মূল্যতালিকায় যেসব খেজুরের দাম লিখে রাখা হয়েছে, সেগুলো আদতে বিক্রি করা হচ্ছে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবুও প্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্য বিক্রেতাদের মন মতো দামেই ক্রেতারা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। খেজুর বিক্রেতারা নিজেরাই দাম নির্ধারণ করেছেন। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। কম দামের খেজুর খাওয়ার সময় ভেতরে নষ্ট অবস্থায় পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান চালালে খেজুরের দাম সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সহনীয় দামে কিনতে পারবেন।
যদিও বিক্রেতাদের দাবি, তারা ঠিকঠাক দামেই খেজুর বিক্রি করছেন। পাইকাররা দাম যত কমাবে, খুচরা বিক্রেতারাও দাম কমাবে। অনেক বিক্রেতা ইচ্ছে করেই নতুন মূল্যতালিকা টানান না।
পুরোনো দামের তালিকা এখনও টানিয়ে রাখা হয়েছে-ছবি জাগো নিউজ
বাবুল মিয়া নামের একজন খেজুর বিক্রেতা বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার দাম কিছুটা কমেছে। যে দামে পাইকারিভাবে কিনে এনেছি, কিছু লাভ করে খুচরা বিক্রি করছি। তাই দামাদামির সময় দাম কমানো হয় না। তবুও অনেকে অহেতুক আমাদের ভুল বুঝে মনোক্ষুণ্ণ হচ্ছেন।
আরও পড়ুন
সাইদুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, খেজুর বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে না। বরং এক খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে আরেক খুচরা বিক্রেতার সম্পর্ক ভালো নেই। যে যেভাবে পারছে, ক্রেতাদের বুঝিয়ে বিক্রি করছে। তবে আমি ক্রেতাদের ঠকিয়ে ব্যবসা করি না।
আমরা কার্টন হিসেবে খেজুর কিনে নিয়ে আসি। সব কার্টনে ভালো খেজুর থাকে না। দেখতে চকচকা হলেও ভেতরে অনেক খেজুর নষ্ট থাকে। অসাধু পাইকাররা তাদের পকেট ভারী করতে কয়েক বছর আগের খেজুর ভালো খেজুরের সঙ্গে মিশিয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। এগুলো ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরাও বিক্রি করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা কার্টন হিসেবে খেজুর কিনে নিয়ে আসি। সব কার্টনে ভালো খেজুর থাকে না। দেখতে চকচকা হলেও ভেতরে অনেক খেজুর নষ্ট থাকে। অসাধু পাইকাররা তাদের পকেট ভারী করতে কয়েক বছর আগের খেজুর ভালো খেজুরের সঙ্গে মিশিয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। এগুলো ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরাও বিক্রি করে দিচ্ছি।
ময়মনসিংহ ফোরামের সমন্বয়ক এহসান হাবীব বলেন, এ বছর খেজুর আমদানিতে সরকার শুল্কছাড় দিয়েছে। সে অনুযায়ী দামে স্বস্তি থাকার কথা। পাইকারিতে দাম গত বছরের চেয়ে কম হলেও ময়মনসিংহের খুচরা বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। অনেক খুচরা বিক্রেতা নিজেদের পকেট বেশি ভারী করতে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস ছালাম বলেন, আমরা বিভিন্ন বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। ক্রেতাদের ঠকানোর প্রমাণ মিললে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। খেজুরের দোকানগুলোতেও অভিযোগ চালানো হবে। পাইকারিভাবে কিনে আনার ভাউচার চেক করা হবে। বেশি লাভ করে বিক্রি করাসহ যথাযথ মূল্যতালিকা না টানালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমডিকেএম/এসএইচএস/এমএস