নদী রক্ষায় জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর করুন: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২৫

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, অবিলম্বে জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর, ডেল্টা প্ল্যানের পর্যালোচনা এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নদী রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‌‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) আয়োজিত বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস-২০২৫ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ধরার সদস্য সচিব শরিফ জামিল আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন।

ধরার সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা জানি নদী কারা দখল করেছে এবং এজন্য কী করতে হবে কাজ শুরু করার জন্য। সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করেছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে। কিন্তু নদীর ক্ষেত্রে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। নয়তো গত ৮ মাসে কেন তারা জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর করলো না। ১৯৯৭ সালে যখন জাতিসংঘ এই আইন করলো তখন সেই কমিটিতে বর্তমান সরকারের দুইজন উপদেষ্টা ছিলেন। তবুও কেন এখনও এটি হলো না? সরকার কেন দেরি করছে? তাহলে বুঝতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের দ্বারা এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে।

নদী বিপন্নের কারণ হিসেবে তিনটি উৎসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী-এই তিনটি উৎস নদী বিপন্নের কারণ। তাই নদী রক্ষায় অবিলম্বে জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর, ডেল্টা প্ল্যানের পর্যালোচনা এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।

পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনায় প্রসারিত নদীকে সরু করা হচ্ছে, বিভিন্ন নদী বিনাশী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। দেশের মানুষের ক্যানসারসহ বিভিন্ন যে মরণঘাতি রোগ হচ্ছে এর জন্যও নদী দূষণ দায়ী, তিনি বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কয়েকদিন আগেই জয়েন্ট রিভার কমিশনের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের দ্বিতীয় দিন যখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্ডিয়ার ভূমিকা, বিশেষ করে তারা কম পানি দিচ্ছে, ফ্লাড গেট তারা হঠাৎ খুলে দেয়, বন্ধ করে দেয় এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হলো সেদিন আর আলোচনার অগ্রগতি হয়নি।

তারা (ভারত) অবাক হয়েছে বাংলাদেশ এই ইস্যু নিয়ে কথা বলে কেন। কারণ বাংলাদেশ দীর্ঘ দুই দশক ধরে এই ইস্যু নিয়ে একদম নীরব ছিল। বাংলাদেশ খালি কাগজে কলমে ইন্ডিয়াকে ভালো বন্ধু বলতো। আর ইন্ডিয়া এদিকে বাংলাদেশের নদী মেরে ফেলার সব ধরনের আয়োজন করেছিল।

তিনি বলেন, আমরা এখন অন্তত এটুকু বলতে পারি আমাদের যে যৌথ নদী কমিশন, তাদের আগের যে অবস্থান সেখান থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে। কিন্তু সেই সরে আসার মাধ্যমে আমরা কী ইন্ডিয়াকে বাধ্য করতে পেরেছি? এখন পর্যন্ত ইন্ডিয়াকে বাধ্য করার মতো যে রাজনৈতিক এবং পররাষ্ট্র কূটনীতি সেখানে আমরা যেতে পারিনি। আমরা এখনো সম্পূর্ণ দাবি করতে পারছি না, জোর গলায় বলতে পারছি না নদীর পানি আমাদের অধিকার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় অনেক এমপি, উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি নদী দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তখন না হয় আমরা পারিনি, তাহলে এই যে নতুন বাংলাদেশে এসে ২০২৫ সালে আমাদের কেন বলতে হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের পর নদীতে দখল বেড়েছে, খালে দখল বেড়েছে! এটা একটা ফ্যাক্ট। এটা কিন্তু শুধু কাগজের কথা না। কেন বেড়েছে, তার কারণটা হচ্ছে যখন গণঅভ্যুত্থান হয় তারপরে আমরা রাষ্ট্রের দখলদারদের সেই বার্তাটা দিতে পারিনি যে নদীর মতো জীবন্ত সত্তাকে আপনারা ‘ধর্ষণ’ করেছেন।

রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় নদীর যেভাবে শ্লীলতাহানি হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে এসেও আমরা বলতে পারবো না যে রাষ্ট্র একশ জন টপ লেভেলের দখলদার, পলিউটারকে ধরে গারদে পুরতে পেরেছে। এমন নাম আমরা বলতে পারবো না, দশজনের নামও আমরা পারবো কি না জানি না। তাহলে জুলাই অভ্যুত্থানতো হয়েছিলো বাংলাদেশের শুদ্ধির জন্য, সেই শুদ্ধির সঙ্গে কারা আপস করলো? যারা দখলদার, ব্যবসায়ী তারা নিজেদের জিডিপির কনট্রিবিউটর নাম দিয়ে যেভাবে দূষণ করেছে সেই দূষণের যদি আমরা অর্থনৈতিক হিসেব করি তাহলে তা তাদের কন্ট্রিবিউশানের থেকে অনেক বেশি। তারা পরিবেশ প্রতিবেশ হত্যার সঙ্গে জড়িত।

আমরা যদি এই দখলদারদের দৃষ্টান্ত না তৈরি করতে পারি; আমরা না হয় দূষণ না বন্ধ করতে পারলাম, যদি তাদের আমরা জেলখানায় নিতে পারতাম, দ্রুত বিচার আইনে তাদের শাস্তি দিয়ে পারতাম আমাদের জীবন্ত সত্তাকে হত্যার দায়ে তাহলে অন্তত নতুন দখলদারদের সাহস হতো না নতুন বাংলাদেশ দখল করার। কিন্তু আমরা দেখছি নতুন দখলদাররা বিপুল উৎসাহে এখন দখল করছে। কারণ এখন প্রশাসন দুর্বল, পুলিশ কাজ করে না। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছে। তারা এখন নতুনভাবে দখল করছে।

বিজ্ঞাপন

আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোশাইদা সুলতানা, পশুর নদী রক্ষাকারী মো. নূর আলম এসকে, খোয়াই নদী রক্ষাকারী তোফাজ্জল সোহেলসহ আরও অনেকে।

এসআরএস/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।