স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন কেন রাত ৩টায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১০ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার দিনগত রাত ৩টায় রাজধানীর বারিধারায় নিজের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: জাগো নিউজ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল রোববার দিনগত রাত ৩টায় রাজধানীর বারিধারায় নিজের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের যারা এগুলো করছে তাদের ঘুম আমি হারাম করে দেবো। তারা কোথাও কোনো স্থান পাবে না।

রাত ৩টায় সংবাদ সম্মেলনের পর প্রশ্ন উঠেছে, গভীর রাতে কেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হলো? সকালে কী সমস্যা হতো?

বিজ্ঞাপন

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই সংবাদ সম্মেলন করেন তার পদত্যাগের দাবি ওঠার মধ্যে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এমন অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় আজ দুপুর ১টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নইলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন কেন রাত ৩টায়?

এদিকে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগে গত রাত কাটিয়েছে রাজধানীবাসী। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডিতে ১০-১২ জনের একদল ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। দুই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রীতে আনোয়ার হোসেন নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে তার কাছে থাকা ২০০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়দুর্বৃত্তরা।

ঘটনার পরপর ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রকাশ্যে এমন ঘটনা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রাজধানীবাসী। এ ঘটনায় রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

পদত্যাগের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার দিনগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে পদত্যাগের জন্য। এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার পদত্যাগের ব্যাপারে আজ প্রথম না (প্রথম দাবি না)। তারা যে কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে বলে সেই কারণ যদি উন্নতি করে দিতে পারি তাহলে তো পদত্যাগের প্রশ্ন ওঠে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন উন্নতি হয় সেই ব্যবস্থা করছি। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং আরও উন্নতি হতে থাকবে।

সবাই যেখানে আপনার পদত্যাদের দাবি করছে সেখানে আপনি নিজে আপনার ব্যর্থতা দেখেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমি যে অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেই অবস্থা থেকে সক্রিয় হয়েছে নাকি হয়নি? এটা আপনারা (সাংবাদিক) ভালো বলতে পারবেন। পুলিশ-আনসারের অবস্থা কী ছিল? ওই অবস্থা থেকে উন্নতি হয়েছে না হয়নি এটা আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

বিজ্ঞাপন

যথেষ্ট চেষ্টার পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে না। সমস্যা কোথায়? আপনি নির্দেশ দেওয়ার পরও দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি কেন- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) থেকে ডেফিনেটলি ইমপ্রুভমেন্ট।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছে। যেহেতু তারা দেশ থেকে প্রচুর টাকা স্থানান্তর (পাচার) করেছে, সেই টাকা তারা ব্যবহার করছে। এই টাকা ব্যবহার করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা কোনো অবস্থায়ই এটা করতে দেবো না। যে কোনোভাবেই এটা প্রতিহত করবো।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন কেন রাত ৩টায়?

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, দিনে-রাতে যে বাহিনীর প্রয়োজন হবে তারা সেখানে যাবে এবং প্রতিহত করবে। আওয়ামী লীগের যারা এগুলো করছে তাদের ঘুম আমি হারাম করে দেবো। তারা কোথাও কোনো স্থান পাবে না।

সব বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তারা টহল কার্যক্রম আরও বাড়াবে। আগামীকাল থেকে যেন কোথাও কিছু না ঘটে এ ব্যাপারে তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) ব্যবস্থা নেবে। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভালোভাবে কার্যক্রম করতে না পারে তাদের বিরুদ্ধেও আমি অ্যাকশন নেবো।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন আরও উন্নতি হবে, অবনতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের কাউকে ছাড় দেবো না বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বিজ্ঞাপন

গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ফেসবুকে সরব নেটিজেনরা

সাংবাদিক হারুন উর রশীদ লিখেছেন, ‘বোকা প্রশ্ন: রাত ৩ টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন থেকে জাতি কি পেল ‘

কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাত তিনটার সময় যে সাংবাদিকরা প্রেস ব্রিফিংয়ে যাবেন, তারা ঘড়ি, মোবাইল, মানিব্যাগ, মাইক্রোফোন ইত্যাদি সাবধানে রাইখেন।’

সাংবাদিক হাফিজ মোল্লা ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘উপদেষ্টাদের সংবাদ সম্মেলন সবসময় গভীর রাতেই হওয়া উচিত। এতে ছিনতাই করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের অন্তত একটু হলেও সুবিধা হয়। গভীর রাতে ছিনতাইয়ের জন্য বের হলে, কেউ ঠেকালে বলা যাবে– উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে যাচ্ছি ভাই।’

বিজ্ঞাপন

jagonews24

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজা পড়লেন শিক্ষার্থীরা

দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী ও ধর্ষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তার গায়েবানা জানাজা পড়েন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনের জোহা চত্বরে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের‘ধর্ষকদের আস্তানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের দিবো না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘আমরা আছি থাকবো, যুগে যুগে লড়বো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি মারুফ সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি কাজ করতে না পারেন তাহলে আমরা এ ধরনের এনজিও মার্কা সরকার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকার চাই না। বাংলাদেশের একটা ইনক্লুসিভ সরকার গঠন করুন। যদি তা করতে ব্যর্থ হন তবে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। প্রয়োজনে ছাত্র সমাজ দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমরা যেমন ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকার হাসিনাকে তাড়াতে পেরেছি আপনাদের সরাতেও আমাদের বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রসনজিৎ সরকার বলেন, দেশে এক ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কোনো কাজই আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তিনি কাঠের পুতুলের মতো গদিতে বসে আছেন। আমাদের সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। কিন্তু তিনি গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে শিশুসুলভ কথাবার্তা বলেছেন। আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ চাই।

পারসিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াজেদ শিশির বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিলো দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ সকল মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করার জন্য। কিন্তু আমরা তার বিপরীত দেখতে পাচ্ছি। ছিনতাই, ধর্ষণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলে দিতে চাই, এই গদি তার বাবার না। তিনি যদি তার দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে ছাত্র-জনতার উপর ছেড়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, যেই নারীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছাত্রদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই নারীদেরকে ধর্ষকরা কুদৃষ্টি দিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। আর আমরা চোখ বুজে বসে আছি। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলী চেয়ারে বসে আমাদেরকে সুশীলগিরি দেখান। তাদেরকে বলে দিতে চাই, সুশীলগিরির দিন শেষ, বিচার চায় বাংলাদেশ। পরিবর্তিত বাংলাদেশে সকল প্রকার গুম, খুন, রাহাজানি, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির কোনো ঠাঁই নেই।

এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।