সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ


প্রকাশিত: ১২:৫২ পিএম, ২১ মে ২০১৬

দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্তা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা সময় যৌন হয়রানির অভিযোগ মিললেও এবার সাবেক এক আইন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের এক নারী আইনজীবী লিখিতভাবে সাবেক এই আইন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন।
 
লিখিত অভিযোগের কপিটি জাগো নিউজের হাতে রয়েছে। অভিযোগটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি গ্রহণ করেছে, তাতে নমুনা স্বাক্ষরও রয়েছে।
 
শারীরিক সম্পর্কের কুপ্রস্তাব ও নানাভাবে হেনস্তার কথা উল্লেখ করে লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগটি দায়ের করেন ওই নারী আইনজীবী। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানিয়েছেন।
 
অভিযুক্ত সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রীর নাম ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও তিনি ৪ বারের সংসদ সদস্য।

তার বিরুদ্ধে খোদ বিএনপিতেও অসন্তোষ রয়েছে বলে জানা গেছে। দলের একাধিক নেতার দাবি, শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে এমন যৌন হয়রানির এমন অভিযোগ আগেও ছিল।

অভিযোগকারী আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) সদস্যও। সুপ্রিম কোর্ট বার এনেক্স হল ভবনের ওই নারী আইনজীবী নিজের অভিযোগে বলেন, ২০১০ সালে বিএনপি আমলের আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের (রুম নং ১২৬ পুরাতন ভবনে) অধীনে সুপ্রিম কোর্ট বারে ৫/৬ মাস জুনিয়রশিপ করি। এসময় তিনি নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিতেন। কিন্তু কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ে জুনিয়রশিপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই।
 
কিন্তু হঠাৎ একদিন শাহজাহান ওমরের স্ত্রী চেম্বারে এসে ‘তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার অভিযোগে’ আমার উপর আক্রমণ করেন এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন।

তিনি জানান, এ ঘটনার পর জুনিয়রশিপ ছেড়ে হল ভবনের ২১৬ নম্বর রুমে প্রাকটিস শুরু করেন। এরপরও হয়রানি থামেনি। শাহজাহান ওমর অন্য লোকজনের মাধ্যমেও কুপ্রস্তাব পাঠাতে থাকেন।
 
ওই নারী আরো জানান, এসব বন্ধ করার জন্য তার মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার্ড মোবাইল নম্বরে তিনি কথা বলবেন না। আন রেজিস্টার্ড নম্বর থেকে কল দিতে বলেন। নতুন সিম কিনে কথা বলতে ও প্রস্তাবে রাজি হতে বলেন। নোংরা এসএমএস, খুনের হুমকিসহ নানা বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে জানালেও কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
 
ওই নারী আইনজীবীর অভিযোগ, গত ১৮ মে আমি শাহজাহান স্যারের রুমে গেলে তিনি আমাকে গালিগালাজ করেন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এসময় এসি রুমের দরজাও ভেঙে যায়।
 
তিনি বলেন, শাহজাহান ওমরের রুমমেট আমিনুর রহিম চন্দনের অনুপস্থিতিতে কক্ষে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হলেও উল্টো তিনি আমারই বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বারে মিথ্যা অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, চন্দনের করা অভিযোগপত্রে শাহজাহান ওমরের স্বাক্ষর ও সমর্থন নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
 
অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে ওই আইনজীবী জাগো নিউজকে বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমি আইনজীবীর সনদ পাই, প্রথমে নিম্ন আদালতে কাজ শুরু করি। পরে ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এন্ডরোলমেন্ট (সনদ) পাওয়ার পর থেকে আমি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করি। কাজ শুরুর দিন থেকেই তিনি আমার প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতেন। বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিতেন।

আমি তাতে কোনো সায় না দেয়ায় তিনি বলেন, তোমাকে গাড়িতে ড্রাইভ দেই। এভাবে বার বার বলার পর এক পর্যায়ে তার সঙ্গে গাড়িতে ঘুরতে বের হতাম। এসময় একদিন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার মনের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না।
 
অভিযোগকারী আরো বলেন, আমি কোনো প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি তার বনানীর চেম্বারসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার অফার করেন। আমি তাকে বোঝাই একজন অবিবাহিত নারী, আমার পক্ষে আপনার কোনো প্রস্তাবেই রাজি হওয়া সম্ভব না।
 
তিনি বলেন, আমার অজান্তে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের সঙ্গে কাজ করেন না তবে তার কক্ষে বসেন এমন একজন আইনজীবীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমার হাইকোর্ট বারের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। যদিও সেটা হওয়ার কথা ছিল আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমার অপরাধ কি তা জানানো সাপেক্ষে। কিন্তু তারা তা না করে আমার সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করেছেন।
 
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাহজাহান ওমর বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ওই নারীই বরং তার উপর আক্রমণ করেছে। জানালার কাচ ভেঙেছে। এমন অভিযোগে ওই নারীর বারের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ক্ষুব্ধ ও আক্রোশবশত তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
 
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ব্যারিস্টার শাহজাহানের বিরুদ্ধে এক নারী আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিত তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনসহ আমরা সমিতির ১৪ জনই আছি।
 
তিনি জানান, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এটা আইনজীবীদের ইন্টারনাল বিষয়।’ এর বেশি কিছু বলতে চান নি তিনি। তবে তিনি ওই নারী আইনজীবীকে সাসপেন্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেইউ/এফএইচ/এসএম/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।