বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে ভিসি ও প্রো-ভিসি নিয়োগ কেন জরুরি?

অধ্যাপক ড. আলীনূর রহমান
অধ্যাপক ড. আলীনূর রহমান অধ্যাপক ড. আলীনূর রহমান , ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

একটি বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে ভাইস-চ্যান্সেলরের (ভিসি) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রশাসক হিসেবে ভাইস-চ্যান্সেলরের সার্বিক সাফল্য নির্ভর করে ৪টি বিষয়ের উপর:

ক) সুষ্ঠুরূপে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সততা;
খ) সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তাঁর পরিপূর্ণ ধারণা;
গ) ভাইস-চ্যান্সেলরকে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁর চারপাশের মানবসম্পদগুলোর (প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ইত্যাদি) সততা ও ন্যায় নিষ্ঠা; এবং
ঘ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালনের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় তাঁদের (ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার) মধ্যে মতের মিল বিদ্যমান থাকা।

ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ট্রেজারার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তাহলে প্রশাসন সুন্দর চলবে এবং সাথে সাথে আরও বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে, তা হলো:

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ সবার প্রতি তাঁদের সুস্পষ্ট জ্ঞান (কে ভালো বা কে খারাপ) থাকবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেতে তাঁদের সময় ব্যয় হবে না।

২. শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে কে, কোন কাজে পারদর্শী, পূর্ব থেকেই জানা থাকার ফলে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্ষেত্রে গতিশীলতা আনা যাবে।

৩. প্রয়োজনে অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাইপাস করে সৎ, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে আপোষহীনদের নিয়ে সুন্দর ও জবাবদিহিতার প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে পূর্ব পরিচিতি থাকায় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবেন।

৫. অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা ভয়ে কোণঠাসা অবস্থায় থাকবেন এবং প্রশাসনকে অসৎ পরামর্শ দিয়ে বিপদে ফেলতে কেউ সাহস পাবে না।

৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে যেমন তাঁরা অনিয়ম করতে সাহস পাবে না এবং তেমনি কোনো অনিয়ম করলে পরবর্তী সময়ে সহজেই তাঁদের আইনের আওতায় আনা যাবে।

৭. অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ট্রেজারার নিয়োগ দেয়া হলে, দায়িত্ব পালন শেষে বা দুর্নীতির কারণে মাঝ পথে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেলে তাঁকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সুযোগ পাওয়া যায় না।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ট্রেজারারের সাথে শিক্ষার্থীদের পূর্ব পরিচিতি থাকায় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে।

স্বৈরাচার তাড়িয়ে শিক্ষার্থী ও জনতার অপরিমেয় রক্ত ও জীবন দানের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতার স্বাদ আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ এখুনি নেয়া প্রয়োজন। এরই অংশ হিসেবে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুর্নীতিমুক্ত, সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে আপোষহীন প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরীণ থেকে ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ট্রেজারারের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ দেওয়া খুবই জরুরি বলে অনেকে মনে করেন। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

লেখক: অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।