যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে ধন্য ঢাবি


প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০১৫

১৯৪৮ সালের কথা। দেশ ভাগের পর কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আইন বিভাগে ভর্তি হন শেখ মুজিবুর রহমান। বছর যেতে না যেতেই ঢাবির ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রে চলে আসেন সকলের প্রিয় মুজিব ভাই।

এসময় শুধু ছাত্র আন্দোলন-ই নয়, কর্মকর্তা কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিতে থাকেন তিনি। আর তাতেই রোষানলে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ চতুর্থ শ্রেণির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে বিশ্বদ্যিালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবকে। এসময় আরো চার নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। শর্ত ছিল ১৫ টাকা জরিমানা দিয়ে অভিভাবক এসে মুচলেকা দিলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। শেখ মুজিব বাদে বাকি চারজন শর্ত মেনে ছাত্রত্ব ফিরে পান।

পরাজয় যাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি, সেই মানুষটি জরিমানা-মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পাবেন, তা হয়! মাথা উঁচু করেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন শেখ মুজিব। ছাত্রত্ব ফিরে পেতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো দেনদরবারও করেননি তিনি।

বহিষ্কৃত ক্যাম্পাসে শেখ মুজিব সংবর্ধিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ক্যাম্পাসের মঞ্চও ছিল প্রস্তুত। কিন্তু ঘাতকেরা ক্যম্পাসের রঙিন মঞ্চে ওঠার আর সুযোগ দেয়নি। ওই দিন বিপদগামী সেনা কর্মকর্তারা রাতের আঁধারে কাপুরুষাচিত হামলায় রক্তাক্ত মঞ্চ তৈরি করেছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ধানমণ্ডির সেই ৩২ নম্বরের বাড়িটি।

তবে ২০১০ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলছিলেন,  ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ঠিক করা হয়েছে, যা আমাদের দায় ছিল।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তিকৃত ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন ও নেতৃত্বদান ছিল তার অসাধারণ দূরদর্শী ও জ্ঞানদীপ্ত গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। অধিকন্তু এটি ছিল ওই সময়ের সাহসী ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে একটি সাহসী পদক্ষেপ। কর্মচারীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ ছিল যথার্থ। তাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অনৈতিক, ন্যায়বিচার এবং বিধি পরিপন্থী ছিল।’

উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু কেন গণমানুষের নেতা, তার প্রমাণ ১৯৪৯ সালের সেই বহিষ্কারাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর অবস্থান। বহিষ্কার হওয়া বাকি চারজন মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাত্রত্ব ফিরে পেলেও বঙ্গবন্ধু তার নিজের অবস্থানে অটল থাকেন। একজন ছাত্রের এই অবস্থান ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ন্যায়ের পক্ষে সাহসিকতার প্রকাশ।

তিনি বলেন, আমরা ইতিহাসের এই মহামানবের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে পেরেছি বলে নিজেদের গর্বিত মনে করি। এই বহিষ্কারাদেশের মধ্য দিয়ে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা জাতি সম্মানিত হয়েছে।

এএসএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।