যে জাদুঘর দ্রোহের কথা বলে
দোতলায় ওঠার সিঁড়িটি বন্ধ। বাহির দিয়ে সিঁড়ি সংযোজন করা হয়েছে ওপর তলায় ওঠার জন্য। বন্ধ সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন ষাটর্ধ্বো সোলায়মান হোসেন। ফরিদপুর থেকে দেখতে এসেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।
বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় বেলা তখন ৩টা ১৫ মিনিট। কথা বলার চেষ্টা চলে সোলায়মানের সঙ্গে। আবেগাপ্লুত সোলায়মানের কথা সরছিল না। নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন সিঁড়ির দিকে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লাল কালিতে চিহ্নিত করা। বুলেটের আঘাতগুলো যেন তখনও রক্ত ঝরাচ্ছে। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে সোলায়মান যখন চাপাস্বরে কাঁদছিলেন, দর্শকরা তখন নির্বাক হয়ে যাচ্ছিলেন।
সোলায়মানের চোখের পানি দেখে অনেকেই নিজেরে অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলেন না। বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের বাতাস যেন আরো ভারী হয়ে উঠল। খুনিদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ আর ঘৃণা যেন এক দ্রোহের পরিবেশে রূপ নিল। কেউ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। কেউ চোখের পানি মুছছে।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে এমন আবেগের প্রকাশ নিত্যদিনের ঘটনা। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত দর্শক আসেন জাদুঘরটি পরিদর্শনে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর একটি বিশেষ জাদুঘর। ঢাকা শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে এটি অবস্থিত, যেটি বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের স্মৃতি সংরক্ষণার্থে স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে শেখ মুজিব স্বাধীনতাপূর্ব কাল থেকেই বসবাস করতেন। তিনি যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তখন এই ভবনেই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ একদল বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি এখন জাদুঘর। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বাড়িটি বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের হাতে তুলে দেন তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এটি এখন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।
প্রতিদিন অসংখ্যা মানুষ আসেন তাদের প্রিয় নেতার বাড়িটি দেখতে। পরিদর্শন শেষ করে শোক বইতে মনের কথা লিখতেও অনেকে ভুল করেন না। যে কথায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি থাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। আর থাকে ঘাতকদের প্রতি ক্ষোভ আর তীব্র ঘৃণা।
বুধবার ছাড়া প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।
এএসএস/এসএইচএস/এমএস