বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত কাপড়ে পুকুর লাল হয়ে গেল
‘বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত কাপড়ে পুকুর লাল হয়ে গেল। তাঁর (বঙ্গবন্ধু) পরনের কাপড়গুলো যখন পুকুরে ধোয়া হলো, তখন মনে হলো গোটা পুকুরের পানি রক্ত হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী আর পুলিশে ঘিরে রাখায় আমরা কাঁদতেও পারলাম না। বুকের কান্না সামলে লাশ দেখেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচির (শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের মা) সঙ্গে গিয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।’
বলছিলেন টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা হামিদা বেগম। বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দাফন এবং জানাজা সম্পন্নকারী মৌলভী আব্দুল হালিমের ভাতিজি তিনি। ওই সময় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন হামিদা।
সোমবার টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধির কাছে একটি দোকানে দেখা মেলে হামিদা বেগমের। কথা হয় ১৫ আগস্ট প্রসঙ্গে। বলেন, ‘সকালেই আমরা রেডিওতে খবর পাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কাকে কাকে হত্যা করা হয়েছে, তার খবর পাচ্ছিলাম না। মেজর ডালিম শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কথা বলছিল। কান্নার রোল পড়ে যায় গ্রামে। এরপর কবর খোঁড়ার হুকুম আসে। পুলিশের পাহারায় কবর খোঁড়া হয়। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় এলাকাজুড়ে। ভয়ে আর কান্নাও করতে পারছিল না কেউ। থমথমে অবস্থা গ্রামজুড়ে।’
এই বৃদ্ধা বলেন, ‘দুপুরের দিকে দুটি হেলিকপ্টার আসে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ নিয়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে পড়ছিল। আমরা তখন গাছে উঠে দেখছিলাম। থানার পাশে ফাঁকা মাঠে লাশ নামানো হলো। পরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এনে কফিন খোলা হলো। কফিন খোলার জন্য ডেকে আনা হয় পাশের গ্রাম থেকে আইয়ুব মিস্ত্রিকে। লাশ ধৌত করলেন মোন্নাফ হোসেন, ইমাম গাজী, সোনা মিয়া। দাফন আর জানাজা করলেন আমার চাচা মৌলভী আব্দুল হালিম। কাফনের জন্য হাসপাতাল থেকে আনা হলো রিলিফের মার্ন কাপড়। গরুর পানি খাওয়ানোর বালতিতে লাশ ধোয়া হলো।
লাশ কবরে নেয়ার আগে সেনাবাহিনী স্বজনদের ডেকে পাঠায়। কেউ ছিল না। ভয়ে যেতেও চাইল না অনেকে। তখন শেখ হাসিনার চাচি (শেখ হাফিজুর রহমানের মা) মরদেহ দেখতে যায়। সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম। ৩০ কি ৩৫ জন মানুষ বঙ্গবন্ধুরে মাটি দিল। আর বঙ্গবন্ধুর গায়ের কাপড় যখন পুকুরে ধৌত করা হলো, তখন যেন গোটা পুকুরের পানি রক্তে লাল হয়ে গেল। পরে সে কাপড়ও আসরের নামাজের পর পুলিশ এসে নিয়ে যায়।’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মরদেহ কফিনসহ মাটি দেয়ার কথা বলেছিল সেনাবাহিনী। তখন চাচা বলেন, মুসলমানের লাশ এভাবে দাফন হয় না। পরে ১০ মিনিট সময় দেয়া হয় দাফন-কাফনের জন্য। যদিও আরও একটু সময় লেগেছিল দাফন শেষ করতে।’
এএসএস/এসএইচএস/আরআইপি