সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের বেপরোয়া হামলার শিকার সাংবাদিকরা
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ঘিরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের বেপরোয়া হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টায় বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বিএনপিপন্থি নীল প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের বাধার মুখে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। এসময় আওয়ামীপন্থি সাদা প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপিপন্থিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা। পুলিশ তাদের কিল, ঘুসি ও লাথি মেরে আহত করেছে বলে হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন আইনজীবীও পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ভোটের আগের রাতে ব্যালট ছেঁড়ার অভিযোগ বিএনপিপন্থিদের বিরুদ্ধে
আহত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস তানবী, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মারুফ, আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম নূর মোহাম্মদ, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন ও ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান মিমসহ আরও কয়েকজন।
পুলিশের মারধরের শিকার জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের অতর্কিত হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা। পুলিশ আমাদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ চালায় এবং কিল-ঘুসি মারে।
আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট মাহফুজ বিন ইউসুফ (৪২), অ্যাডভোকেট আল ফয়সাল সিদ্দিকী (৩৬) ও অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান আহাদ (৩৮)।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, আইনজীবীসহ আহত সাংবাদিকদের অনেকে হাসপাতালে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন: কঠোর নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ শুরু
হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করেছেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) নেতারা। এলআরএফের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দুই দিনব্যাপী (১৫ ও ১৬ মার্চ) ভোটগ্রহণের প্রথম দিন ছিল বুধবার। ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান বিচারপতি মো. মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করলে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন রাত ৮টার দিকে আইনজীবী সমিতির তৃতীয় তলায় সেমিনার কক্ষে বক্সে রাখা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি এবং বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের পৃথক উপ-কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: বিএনপির আইনজীবীদের বাধার মুখে ভোটগ্রহণ বন্ধ
এরপর বুধবার সকাল ১০টায় যথারীতি ভোটগ্রহণ শুরু হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সাদা ও নীল প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বাধার মুখে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার ৮ হাজার ৬০২ জন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেএ/এফএইচ/এমকেআর/এমএস