স্মৃতিতে ভাস্বর কিরণ সাহা
সাহা কিরণ কুমার কচি দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে একাগ্রচিত্তে সাংবাদিকতা পেশায় একজন পেশাদার ও সৎ সাংবাদিক হিসেবে সব মহলের কাছে পরিচিত ছিলেন। টানা ১৪ বছর দৈনিক যুগান্তরের যশোর ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। সবার প্রিয় এই মানুষটি ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যুগান্তর যশোর ব্যুরো অফিসে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার অকাল প্রয়াণে ব্যথিত স্বজন, বন্ধু শুভাকাঙ্খী।
অনুজ সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দুই বছরে এক গভীর সম্পর্কের জালে আবদ্ধ হয়েছিলাম। বিগত দুই বছর কিরণ সাহার প্রিয় কর্মস্থল যুগান্তর ব্যুরো অফিসে আমি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনুভব করেছি কর্তব্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং। প্রতিটি পদে পদে প্রিয় মানুষটির শূন্যতা অনুভব করেছি। সংকটে সংগ্রামে তার নীতি-আদর্শ আর দিকনির্দেশনা আমাকে প্রেরণা দেয়। তার দেখিয়ে যাওয়া পথে হাঁটছি। একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি আমাকে শাসন করেছেন যেমন, তেমনি সোহাগও করেছেন। সেদিন তিনি অভিভাবকের ভূমিকায় ছিলেন। তাই হয়তো আজ আমি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি। প্রতিটি মুহূর্তে তার স্মৃতি আমাকে তাড়িত করে। কোনটি করা উচিত, আর কোনটি করা উচিৎ নয় সেটা তার দিকনির্দেশনা আজও আমার স্মৃতিতে ভাস্বর। আমি অনুভবরে অনুভূতি থেকে তার স্মৃতিকে ধারণ করছি।
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন কিরণ সাহা। একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন আমৃত্যু। ২০০০ সালে কিরণ সাহা দৈনিক যুগান্তর যশোর অফিসে ব্যুরো প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন। তিনি যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচনে সদস্য, যশোর প্রেসক্লাবেও বেশ কয়েকবার সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি গোপালগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আলোর দিশারী’ পত্রিকার মাধ্যমে। মকসুদপুর প্রতিনিধি হিসেবে এ পত্রিকার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পরবর্তীতে যশোর এসে কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ‘স্ফুলিঙ্গে’ শিক্ষানবিশ স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। সেটি ১৯৭৭ কিংবা ১৯৭৮ সাল হবে। পেশাগত দক্ষতার গুণে পদোন্নতি পেয়ে এ পত্রিকায় তিনি দীর্ঘদিন বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। স্ফুলিঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ৮২ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশবাংলায় যশোর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ পত্রিকার সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে ওই বছরই তিনি যশোর প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেন। পরবর্তীতে দৈনিক খবর ও বাংলাবাজার পত্রিকায়ও যশোর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।
প্রচারবিমুখ এই মানুষটি সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছড়া লেখায়ও হাত পাকিয়েছেন। এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, চাঁদেরহাট, পুনশ্চ যশোরসহ আরো কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তিনি ১৯৫৪ সালের ৫ জুলাই গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে উপজেলার অজপাড়া গাঁ মহারাজপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার প্রয়ান দিবসে বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তার নীতি ও আদর্শ হোক আমাদের পথচলার অনুপ্রেরণা।
লেখক : সাংবাদিক, দৈনিক যুগান্তর, যশোর ব্যুরো।
বিএ