ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিক তানুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন
ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জাগোনিউজ২৪.কমের প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জেলা প্রেসক্লাব।
শনিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানুকে গ্রেফতারের খবরে থানায় ছুটে যান প্রেসক্লাব নেতারা। পরে রাত ১০টার দিকে প্রেসক্লাব সভাপতির নেতৃত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসক্লাব চত্বরে তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত মানববন্ধনে ঠাকুরগাঁও ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় অপ্রতুল পদক্ষেপের কথাগুলো যখন সাংবাদিকরা তুলে ধরছেন এবং পুনর্গঠনের পথ খুঁজে পেতে আলোচনার সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, সে সময় গণমাধ্যমের ওপর আঘাত ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে বিপন্ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে তিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর জাগো নিউজের প্রতিনিধিকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে মামলা প্রত্যাহার ও তানুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।’
মানববন্ধনে ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাকরুদ্ধ করতে চায় একটি গোষ্ঠী। তাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ও ব্যক্তি স্বার্থে যারা এ আইনের চরম অপব্যবহার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
সাংবাদিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার করে তানভীর হাসান তানুকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে বরাদ্দের বিপরীতে রোগীর খাবার পরিবেশনে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে তানুসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজের দায়ের করা এ মামলায় তানু ছাড়া বাকি যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ।
যা ছিল সেই প্রতিবেদনে
যে প্রতিবেদনের জেরে সাংবাদিক তানুকে মামলায় আসামি করা হয়েছে, সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!”
৫ জুলাই বিকেলে জাগোনিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, একজন করোনা রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ৩০০ টাকা সরকারি বরাদ্দ থাকলেও ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে একজন রোগীকে তিনবেলা যে খাবার দেয়া হচ্ছে, তার বাজারমূল্য ৭০-৮০ টাকার বেশি নয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দেয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই বাড়ির খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। খাবার সরবরাহে করোনা ইউনিটে দর্শনার্থীর আনাগোনায় সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে দেখা যায়, (প্রতিবেদন প্রকাশের আগে) ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ১৭৪ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের সকালের নাশতায় দেয়া হচ্ছে একটি করে পাঁচ টাকা দামের পাউরুটি, আট টাকা দামের ডিম ও চার-পাঁচ টাকা দামের কলা। দুপুরের খাবারে দেয়া হচ্ছে ডাল, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ এবং রাতের খাবারেও ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ অথবা একটি ডিম। বর্তমান বাজারদরে তিন বেলার খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ৭০-৮০ টাকা। রোগীদের খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ফলমূল দেয়ার কথা থাকলেও সেগুলো দেয়া হচ্ছে না।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুলের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন সাংবাদিক তানু। তখন ডা. নাদিরুল বলেন, ‘ঠিকাদার যেভাবে খাদ্য সরবরাহ করছেন সেভাবেই করোনা রোগীকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক সময় ঠিকাদারের খাদ্য সরবরাহে সমস্যা হলে খাবারের মান খারাপ হতে পারে।’
এএইচ/এমআরআর