রোজিনা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা সাংবাদিকদের
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেফতারের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন সাংবাদিকরা। তারা হেনস্তাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিকরা।
বুধবার (১৯ মে) সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও গ্রেফতারের ঘটনায় ডিআরইউ’র প্রতিবাদ সমাবেশে এসব দাবি জানান সাংবাদিকরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, সারাদেশের সাংবাদিকরা এক হয়েছেন। তারা এই মামলা প্রত্যাহার চান। যারা রোজিনাকে হেনস্তা করেছে তাদের শাস্তি চান। এই মামলার মেরিট নেই। আমরা আজকে এই মামলার প্রত্যাহার চাই।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, প্রশাসনের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে সাংবাদিকরা চক্ষুশূল হয়েছেন। ফলে রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা। রোজিনার মামলা যদি প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত যাব আমরা।
ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানি বলেন, রোজিনাকাণ্ডে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অরুচিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এই বক্তব্য প্রত্যাহার চাই। আমরা আরও দেখেছি- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এটা হাস্যকর। যারা রোজিনার ওপর হামলা করেছে তারাই আবার তদন্ত করবে, আমরা এটা মানি না। এই তদন্ত কমিটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের হত্যাচেষ্টায় তার পরিবার, তার কর্মস্থল না করলেও ডিআরইউ হত্যাচেষ্টা মামলা করবে।
তিনি বলেন, রোজিনা ইসলাম ছাড়াও যেসব সাংবাদিক জেলে আছেন তাদেরও মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। কাল যদি রোজিনাকে মুক্তি না দেয়া হয় আমরা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একত্রিত হয়ে আদালত অভিমুখে যাত্রা করবো। আমরা রোজিনাকে মুক্ত করেই ঘরে ফিরব।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, আমরা পেশাদার সাংবাদিক। আমরা রাস্তায় আন্দোলন করতে চাই না। দ্রুত রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই।
এ সময় সাংবাদিকরা ‘আমার বোন নির্যাতিত কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘প্রশাসনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই’ স্লোগান দেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আশা করছি, আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদালত যে জামিনের শুনানি করবেন, সেই শুনানিতে আমাদের বোন মুক্ত হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আলোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেব। আগামীকাল সমাবেশ হবে, সেখানে নির্দেশনা জানানো হবে।
মানববন্ধনে অন্যরা বলেন, দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুমে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে, যা আইনের চরম লঙ্ঘন। এটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথে বড় বাধা।
সমাবেশে ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। আমরা রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। যারা অন্যায়ভাবে তাকে হেনস্তা করেছে আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাই।
তিনি বলেন, যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটিতে আমরা আশ্বস্ত নই। আমরা চাই অন্য মন্ত্রণালয়ের নিরপেক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম, ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ কর্মরত সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন অংশ নেয়।
এসএম/এআরএ/জেআইএম