সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৯ এএম, ১৮ মে ২০২১

অডিও শুনুন

দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে ‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টস চুরির’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার (১৭ মে) রাত পৌনে ১২টার দিকে শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের হয়। মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী।

মামলা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩৬৯ ও ৪১১ ধারা এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের ৩ ও ৫ ধারায়।

পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বাদী শিব্বির আহমেদ ওসমানী অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের দফতরে ঢুকে দাফতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানো এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন রোজিনা ইসলাম। তখন একান্ত সচিব দাফতরিক কাজে সচিবের কক্ষে ছিলেন। এ সময় সচিবের দফতরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান তাকে বাধা দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, উপ-সচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমিন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মো. মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে ডকুমেন্টগুলো তিনি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার নারী পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন।’

এর আগে, সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার একান্ত সচিব (পিএস) মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার (সিনিয়র সহকারী সচিব) কক্ষে থাকা ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে কাগজ সরানোর’ অভিযোগে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনাকে

বিকেল ৩টায় রোজিনাকে আটক করার পর কেড়ে নেয়া হয় তার মোবাইল ফোন। প্রথমে সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলার ৩৩৯ নম্বর কক্ষে সচিবের দফতরের কর্মকর্তারা তাকে আটকে রাখেন। পরে সচিবালয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সেখানে আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই কক্ষ থেকে রোজিনাকে নিয়ে যায় শাহবাগ থানা পুলিশ।

আটক থাকাবস্থায় রোজিনা ইসলাম দাবি করেন, সচিবের সঙ্গে দেখা করতে পিএসের রুমে গিয়েছিলেন তিনি, ফাইল থেকে কোনো কাগজ সরাননি। সচিবের দফতরের মিজান নামের এক কনস্টেবল তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলেও কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন রোজিনা।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও স্বাস্থ্য সেবা সচিব লোকমান হোসেন মিয়া কোনো কথা বলেননি।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচিব স্যারের পিএসের রুমে কেউ ছিল না—এমন সময় সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আসেন। এসে তিনি গুরুত্বপূ্র্ণ কিছু ফাইলের ছবি তোলেন, সেই ছবিগুলো এখনো মোবাইলে আছে। কিছু কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এটা একজন অতিরিক্ত সচিব এবং একজন পুলিশ সদস্য দেখে ফেলেন। তারা তাকে চ্যালেঞ্জ করেন যে, এটা আপনি নিয়ে যেতে পারেন না। পরে নারী পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখন অভিযোগ দায়ের করা হলো, অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

এদিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে ওই থানার সামনে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের’ শাস্তি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে।

টিটি/এইচএ

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।