করোনায় যেভাবে একজন সংবাদকর্মী চাকরি হারালেন
কামরুল হাসান (ছদ্মনাম)। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন বিভাগে সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের পর এপ্রিল মাসে তাদের সংবাদপত্রের কর্মীদের বেতন অর্ধেক করে দেয় মালিকপক্ষ। কিন্তু করোনার মধ্যে অনলাইন বিভাগের কর্মীরা আগের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করায় এপ্রিলে তারা পুরো বেতনই পান। তবে মে মাসে শেষ রক্ষা হয়নি। অনলাইন বিভাগের কর্মীদেরও বেতন অর্ধেক করে ফেলে মালিকপক্ষ।
ফলে বেতন অর্ধেক হয়ে যায় কামরুল হাসানেরও। তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন। অর্ধেক হওয়ায় মে মাসের বেতন পান মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা। খাবার খরচ শেষে অল্প কিছু টাকা বাঁচে তার, তা গ্রামের বাড়িতে পাঠান। তার বাসা ভাড়া ৪১০০ টাকা। ফলে মে মাসে আর বাসা ভাড়া দিতে পারেননি কামরুল। তাদের জুন মাসের বেতন এখনো হয়নি। তবে জুনেও বাসা ভাড়া দেয়ার কোনো রাস্তা দেখছিলেন না তিনি। সেজন্য রাজধানীর ভাড়া বাসা ছেড়ে ৩০ জুন গ্রামে চলে যান।
কিন্তু গ্রামে প্রায় সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে কম্পিউটারে পুরোদমে অফিসের জন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলেন না কামরুল হাসান। অন্যদিকে অফিস থেকে আগেই জানানো হয়েছে, কাজে ব্যাঘাত মেনে নেয়া হবে না তারা। তাই নিজে থেকেই কামরুল ২ জুলাই চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথা জানান কর্তৃপক্ষকে। ৩ জুলাই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তার সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের অনলাইন এখনো লাভজনক। তারপরও আমাদের বেতন অর্ধেক করে দেয়া হয়েছে। আমাদের বেতন তো এমনিতেই অনেক কম। এর মধ্যে আবার বেতন অর্ধেক করে দিয়েছে। অর্ধেক করার পর মাসে মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা পেতাম। এই টাকা তো খাওয়া-দাওয়া আর হাত খরচেই শেষ হয়ে যায়। একদিকে সংসারেও টাকা দিতে পারছিলাম না, অন্যদিকে বাসা ভাড়াও দিতে পারছিলাম না। এ অবস্থায় ঢাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার খরচ সামলাতে না পেরে গ্রামে এসেও ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলাম না বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে। বেতন কমালেও পূর্ণ সময় কাজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অফিস থেকে বলেছে, তারা কাজে কোনো ধরনের ব্যাঘাত মেনে নেবে না। গ্রামে কাজ করার সময় ইন্টারনেট প্যাকেজের পেছনে এবং রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলার মোবাইল বিল যাচ্ছিল অনেক টাকা, যার কোনোটিই প্রতিষ্ঠান দিচ্ছিল না। এ অবস্থায় চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম।’
পিডি/এইচএ/পিআর