বাংলাদেশের প্রথম টেলিভিশন জাদুঘর
বাংলা ভাষার প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে এই টেলিভিশনটি। মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি থেকে শুরু করে দেশ ও জাতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যমটি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারণার পাশাপাশি চ্যানেলটি বিনোদন ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছে অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে। তরুণ প্রজন্মের কাছে গৌরবোজ্জ্বল অতীতের ইতিহাস তুলে ধরতে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দফতরে চালু হয় ‘টেলিভিশন জাদুঘর’। যা বাংলাদেশের প্রথম টেলিভিশন জাদুঘর। সব বয়সের মানুষকে বিটিভির সোনালি অতীতে ফিরিয়ে নিতে মূলত কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
জাদুঘরে যা দেখতে পাবেন
বাংলাদেশ টেলিভিশন জাদুঘরে প্রবেশের আগে হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে বিশালাকারের একটি ক্যামেরা। জার্মানির তৈরি কেসিকে ৪০ মডেলের এই ক্যামেরাটি আশির দশকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। জাদুঘরের ভেতরে একপাশে রাখা আছে বিটিভিসহ বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রথম রঙিন স্টুডিও ক্যামেরা। কেসিকে-৫০ মডেলের এই ক্যামেরাটি ১৯৮০-এর দশকে জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এছাড়া জাদুঘরে দেখতে পাবেন বি ভি ইউ-১১০ পি মডেলের ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার, সত্তর দশকের অ্যারিফ্লেক্স ১৬ বিএল মডেলের ১৬ এমএম নিউজ ক্যামেরা, ক্যানন স্কুপি ১৬ এমএস মডেলের ১৬ এমএম নিউজ ফিল্ম ক্যামেরা, সুইজারল্যান্ড থেকে সংগ্রহকৃত বোলেক্স এইচ-১৬ রিফ্লেক্স মডেলের ১৬-এম এম ফিল্ম ক্যামেরা, আমেরিকা থেকে সংগ্রহকৃত সিপি-১৬ আর মডেলের সিনেমা প্রোডাক্টস সাউন্ড ক্যামেরা, জাপান থেকে সংগ্রহকৃত এইচ-৮৫ মডেলের ক্যামেরা টিউব হিটাসি, আশির দশকে জাপান থেকে সংগ্রহকৃত সিটিসি এস-২০ মডেলের সাদাকালো ক্যামেরা, জার্মানি থেকে সংগ্রহকৃত বসএফডিএল ৬০ মডেলের টেলিসিন মেশিন, জার্মানি থেকে আমদানিকৃত বিসিএন-২০ মডেলের ১’’ ভিডিও টেপ, টাইপ-৭-৬৯৭-৩১০-৪৬৩ মডেলের ১৬ এমএম প্রোজেক্টর, এইচপি-৪২৬১ মডেলের অডিও স্পিকার, শব্দ ধারণ যন্ত্র, বিসিএন ৪১/৫১ মডেলের ভিডিও টেপ রেকর্ডার, ইএমটি-৯৩০ মডেলের অডিও ডিস্ক প্লেয়ার, ২৬১০ মডেলের এএম সাইডব্যান্ড এনালাইজার, এএসএসিএএ এম বি-১০০বি মডেলের পোর্টেবল মনিটর, ১৯৯০ দশকে আমেরিকা থেকে সংগ্রহকৃত ১০১৯৩৫ মডেলের মাইক্রোওয়েভ ডিস্ক, ১৯৭৮ সালে জাপানের এনইসি কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রস্তুতকৃত পিসিএন-১০১৩ বিএইচ মডেলের ভিএইচ এফ টিভি ট্রান্সমিটার, ৪২৬ এ মডেলের টিভি ভিজুয়াল ডিমডুলেটরসহ সম্প্রচারের নানা যন্ত্রপাতি।
সেইসঙ্গে বিটিভি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিটিভিতে সম্প্রচারিত উল্লেখযোগ্য সংগীতানুষ্ঠান, নাটক, আলেখ্যানুষ্ঠান, যাত্রা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলো সংরক্ষিত আছে জাদুঘরে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) সুরত কুমার সরকার বলেন, টেলিভিশন সম্প্রচারের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তণ তুলে ধরার জন্য সূচিত হয়েছে টেলিভিশন জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ধারণা। আমরা এটির নামকরণ করেছি ‘টেলিভিশন জাদুঘর’। এই জাদুঘর টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইতিহাস তুলে ধরবে। ঐতিহাসিক ইভেন্ট, ধ্রুপদী ও জনপ্রিয় অনুষ্ঠানমালাসহ সংবাদ সম্প্রচারে বিটিভির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এই মিউজিয়াম দর্শকদের বিটিভির ইতিহাস, সূচনালগ্ন থেকে বর্তমান সময়ের প্রযুক্তিগত বিবর্তণ, অনুষ্ঠানমালা, বিভিন্ন সময়ে বিটিভির ঐতিহাসিক ভূমিকা ও স্মরণীয় ঘটনাবলি জানার সুযোগ করে দেবে। জাদুঘরটি উন্নয়নের আরও পরিকল্পনা রয়েছে।
কখন যাবেন
সরকারি বন্ধ ও সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টেলিভিশন জাদুঘরেটি খোলা থাকবে। দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে নির্ধারিত সময়ে এই জাদুঘর ঘুরে আসতে পারবেন।
জেডএ/এমএস